তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধি: গ্রীষ্মের রুক্ষ তাপে ক্লান্ত প্রকৃতিকে যখন ছায়া, রঙ ও প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে ফুল, তখন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে এক অপার সৌন্দর্যের ভুবন।
এপ্রিল-মে মাসজুড়ে ক্যাম্পাসের প্রতিটি মোড়, সড়ক, ভবন ও প্রান্তরে ফুটে থাকে কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া, জারুল, সোনালুসহ নানান বাহারী ফুল। যে ফুল শুধু শোভা নয়, শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে ওঠে প্রেরণার উৎস, দর্শনার্থীদের বিস্ময় আর প্রকৃতির সঙ্গে আত্মিক সংযোগের প্রতীক।
কৃষ্ণচূড়া: ক্যাম্পাসের স্মৃতিসৌধ, প্রশাসন ভবন, টিএসসিসি, বিভিন্ন হল ও একাডেমিক ভবনের চারপাশ কৃষ্ণচূড়ার লাল আভায় আগুনরাঙা এক দৃশ্যপট তৈরি করে। এই ফুল যেন শহিদদের রক্তের রঙে আঁকা এক প্রতিবাদী স্মৃতি। ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম বলেন, “এই রক্তিম কৃষ্ণচূড়া শুধু রঙ নয়, আমাদের প্রাণে সাহসের দীপ্তি জাগায়।”
সোনালু: ডায়না চত্বর থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে সোনালুর ঝুলন্ত থোকাগুলো যেন হলুদ গাঁদার অলংকার। মৃদু হাওয়ায় দুলতে থাকা এই সোনালি কণ্ঠরথে জড়িয়ে থাকে শিক্ষার্থীদের একান্ত মুহূর্ত, প্রেমিক প্রেমিকাদের কবিতার ছন্দ। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিয়া বলেন, “সোনালু গাছের নিচে দাঁড়ালে মনে হয় যেন রূপকথার দরবারে দাঁড়িয়ে আছি।”
জারুল: কেন্দ্রীয় মসজিদ, জিমনেসিয়াম, লাইব্রেরি ও আবাসিক হল প্রাঙ্গণের জারুল গাছগুলো বেগুনি-নীল রঙে যেন এক প্রশান্তির ক্যানভাস। আল কুরআন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, “বৃষ্টিভেজা জারুলের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা এক অনুপম অনুভূতি—যা শুধু হৃদয়ে ধারণ করা যায়, ক্যামেরায় নয়।”
কনকচূড়া: উজ্জ্বল হলুদাভ কমলা রঙের কনকচূড়া গ্রীষ্মের সূর্যরশ্মিকে মনে করিয়ে দেয়। ইংরেজি বিভাগের জাহিদ হাসান বলেন, “প্রকৃতি যেন নিজের হাতে এই কনকচূড়া দিয়ে একটি সজীব পেইন্টিং এঁকে রেখেছে। মন খারাপ থাকলেও এই ফুলের রঙে মনে প্রশান্তি আসে।”
আরও পড়ুনঃ সংসদ নির্বাচনে রামগঞ্জে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী জাকির হোসেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একরের এই ক্যাম্পাস আমাদের জন্য প্রকৃতির এক দুর্লভ উপহার। প্রতিটি ঋতুতে এখানকার ফুলেরা নতুন প্রাণ এনে দেয়। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শুধু সৌন্দর্য নয়, এটি আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির অংশ।”
এই ফুলেরা শুধু ঋতুবদলের চিহ্ন নয়—তারা স্মৃতি, আবেগ ও সৌন্দর্যের সঙ্গী। প্রকৃতি এখানে কথা বলে রঙে, গন্ধে, ছায়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পথ হয়ে ওঠে যেন এক-একটি কবিতা, যার প্রতিটি পঙক্তি রচিত হয় কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, জারুল ও কনকচূড়ার রঙে। এই কবিতাই হয়তো শিক্ষার্থীদের জীবনের সবচেয়ে রঙিন অধ্যায়—একটি ফুলেল গল্প।