
মোঃ আবু বকর সিদ্দিকঃ মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের একটি হলো পবিত্র ইদুল ফিতর। দীর্ঘ ১ মাস সিয়াম পালন শেষে প্রতিটি মুসলমানের জীবনে খুশির বার্তা নিয়ে আগমন হয় এই ইদ উৎসবের। এবারের রমজানেও খোলা ছিল দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সে হিসেবে এবারের ইদ একটু ভিন্ন আমোজ নিয়ে আসছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে। ইদ নিয়ে তারুণ্যের ভাবনায় ও অনুভূতি জানাচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ইদের খুশি ভাগাভাগির মাঝেই প্রকৃত আনন্দ,সাম্যের উৎসবে বৈষম্য না হোক
ইদ মানে হলো আনন্দ, খুশির দিন। এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানের আনন্দ, খুশির দিন নিয়ে আসে ইদুল ফিতর। সারা বছরে মুসলমানরা অপেক্ষায় থাকে তাদের প্রাণের উৎসব ইদুল ফিতর আর ইদুল-আযহার। এক মাস সিয়াম সাধনার পর যখন ইদুল ফিতর আসে তা যেন আনন্দের বন্যা নিয়ে আসে। সকলের সাথে এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে দূর-দূরান্ত থেকে সকলেই শেকড়ের টানে চলে আসে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে। সমস্ত ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর বাকি দিনগুলোর কষ্টের কথা ভুলিয়ে দিতেই যেন উদয় হয় ইদের দিন। তাইতো সকলের বাড়িতে চলে আসা সমস্ত আনন্দকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য। একটা ভালো সময় কাটানোর ইচ্ছে সকলের সঙ্গে। সুন্দর ভাবে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে খুশিটা ভাগাভাগি করে নিতে চাই সকলেই। আর এই আনন্দের মুহুর্ত গুলোর মতো যেন আমাদের বাকি দিনগুলোও আনন্দের হয়ে ওঠে এই প্রত্যাশা থাকবে।
বছর ঘুরে আবার এসেছে ইদুল ফিতর। ইদ মানেই আনন্দ উল্লাস। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ইদ আমাদের মাঝে সৌহার্দ্য-সংহতির বার্তা বয়ে আনে। রমজানের শেষ দিনে আকাশে চাঁদ দেখা দিলে, সবাই সমস্বরে গেয়ে ওঠি “রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ইদ”। এবারের ইদ সকলের মাঝে আনন্দ-আহ্লাদ বয়ে আনুক। ইদ ধনী-গরীবের মাঝে বৈষম্য দূর করে সাম্যের কথা বলে। ইদে শুধুই দামি পোশাকে বিলাসীতা না করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, শ্রেনী-পেশা দলমত নির্বিশেষে আর্তমানবতার পাশে দাঁড়াই। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সাম্য, মৈত্রী, সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হই। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং গরীব-দুঃখীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে আশা করি ইদের দিনটি ভালো কাটবে।
মাইশা খাতুন
ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি
বড়বেলার ইদ মানে নতুন এক বাস্তবতাকে চেনা
যতদূর মনে পড়ে ছোটবেলায় বাবা যখন বাসায় ইদের ছুটিতে আসতো আমাদের ইদ শুরু হতো তখনই।
আর এখন?
এই যে ছুটি শেষে তিনভাই বোন বাসায় ফিরে আসি শূন্য ঘরে পূর্ণ করতে, এখন ইদ মনে হয় এভাবেই শুরু হয়।
ঐ যে বলেছিলাম বাবা বাসায় আসতেন আমরা সারাদিন লাফিলাফি করতান বাড়িতে আনন্দের একটা রোল পড়ে যেত, আমার দাদী তখন বেচে ছিলেন। মা আর দাদী মিলে বিকেল থেকে ইফতারের আয়োজন করতেন । তারপর?
তারপরে এভাবেই ইদের দিন এসে যায়,বাবাকে বায়না করতাম এটা ওটা কিনে দিতে। ভাইকে আবদার করতাম নাগরদোলা চড়াতে নিয়ে যেতে। ইশ!আমার নাগরদোলা উঠা যে আর হলো না! তারপর?
তারপরে হুট করে বড় হয়ে গেলাম, সবকিছু বদলে যেতে লাগলো, জায়গা পরিবর্তন হলো কবে, এখন আর এসব হয় না, রমজানেও বাড়ি ফেরা হয় না, ভাইবোনের সাথে আগের মতো খুনসুটি হয় না,চাঁদরাতে সারারাত ঘুরে বেরিয়ে সকালে মায়ের গালি খাওয়া হয় না! এইতো আমার ইদ, কখনো ঢাকায় না যাওয়া ছেলেটা এখন বাস চেপে একাই ফিরে আসে ঘরে। ছোটবেলা তো ফিরে পাবো না আর, তাই আমার পরিবারই আমার স্বর্গ, আমার পরিবারেই আমার ইদ। তাদের সাথে ছোটবেলার প্রতিটা মূহুর্ত ফিরে পাবার চেষ্টা করব। এই মোর ইদ,এই মোর ইদ আনন্দ!
সাজ্জাদ শিমুল
ইংরেজি বিভাগ
আরও পডুনঃ ঈদ সালামির আনন্দ
এবারের ইদ আমাদেরকে অনুপ্রেরণা দিবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার
প্রতিবছর দুইটি ইদ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন,বন্ধুবান্ধবদের সাথে কথায়,আড্ডায়,গল্পে ভালো সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়।ধনী,গরীব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ইদের আনন্দে মেতে উঠে সবাই। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার মধ্যেই চলতে থাকে ইদের প্রস্তুতি। ইদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়া, গোসল সেরে নতুন পোশাক পড়ে মিষ্টিমুখ করে বাবা-মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে ইদগাহে যাওয়া,নামাজ পড়ে কুশল বিনিময় করা ।
আত্নীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে কুশল বিনিময় করা, বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া। বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া, একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। সব মিলিয়ে আনন্দঘন মূহুর্তে প্রিয়জনদের সাথে কাটে সময়টা। আশা করি এইবারের ইদ আমাদেরকে গতবছরের সকল ট্রাজেডি ভুলিয়ে নতুন উদ্যামে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগাবে।।সবার ইদ ভালো কাটুক।
শাকিল হোসাইন
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
বছর ঘুরে আবার বাঁকা চাঁদের রঙ্গিন ইদ
ইদের শুরুটা হয় বাড়ি ফেরার প্রশান্তির সুখস্মৃতি নিয়ে, তবে সময়ের সাথে সাথে ইদ আনন্দের অনুভূতি অনেকটাই পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন হয়তো নতুন জামা, নতুন পাঞ্জাবি বা নতুন জুতা কিনার মধ্যে ছোটবেলার সেই ইদ আনন্দ খুজে পাওয়া যায় না। পরিবার-পরিজন, বাবা-মা, ভাই-বোন কে এক পলক দেখার মাধ্যমে প্রশান্তি সুখ মিলে।
সারাবছর ক্লাস, টিউশন,পরীক্ষার কারনে আগের মতো নীড়ে ফেরা হয়না এতো ঘনঘন তাই হয়তো প্রশান্তির এই সুখস্মৃতি। গ্রীষ্মের ছুটি বা ইদের ছুটিতে বাড়িতে ফেরা হয়, সময় দেওয়া হয় পরিবার পরিজন অত্বীয় স্বজনকে। বড়দের কাছ থেকে সালামী নেওয়ার মাধ্যমে যে ইদ আনন্দ পেতাম এখন সেই ইদ আনন্দটা পাই জুনিয়র বা ছোটদের সালামী দেওয়ার মাধ্যমে। হয়তো সময়ের সাথে সাথে এভাবেই বড়দের ইদ আনন্দের অনুভূতি গুলোর পরিবর্তন হয়। ইদের দিন খুব সকালে ঘুম ভেঙে যায় বাচ্চাাদের হৈ-হুল্লোড় চিৎকার -চেচামেচিতে তখন আফসোস হয় আবার যদি ছোট হতে পারতাম , ফিরে যেতে পারতাম আমার সেই মধুর শৈশবে। তবে এখনকার ইদ আনন্দের অনুভূতিগুলো ভিন্ন যেটার উপভোগ্যতাও অন্যরকম।
আকাশ আহমেদ
ইংরেজি বিভাগ