
মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রাণিজ আমিষ অপরিহার্য। যে আমিষগুলো প্রাণিজগৎ থেকে পাওয়া যায় তাদেরকে প্রাণিজ আমিষ বলে। যেমন: মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি। এই আমিষ বা প্রোটিনকে প্রথম শ্রেণির প্রোটিন বলে।
সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে প্রাণিজ আমিষ সমূহ কে সহজলভ্য ও নিরাপদ করে তুলতে, বিশ্বের প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে, মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে এবং প্রাণিসেবার মহান ব্রত নিয়ে সারাবিশ্ব ব্যাপি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ভেটেরিনারিয়ানরা। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বন্য প্রাণি রক্ষায়ও ভেটেরায়ানরা কাজ করে যাচ্ছে।
আজ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস। সারা বিশ্বের প্রাণিসেবায় কর্মরত ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য একটি বিশেষ দিন। প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার সারা বিশ্বে একযোগে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস পালিত হয়।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস:
১৮৬৩ সালে এডিনবার্গ ভেটেরিনারি কলেজের প্রফেসর জন গ্যামেজ সারাবিশ্বের ভেটেরিনারিয়ানদের ইউরোপে একটি সভাতে আমন্ত্রণ জানান। পরবর্তীতে এই সভাটিই প্রথম আন্তর্জাতিক ভেটেরিনারি কংগ্রেস নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৬ সালে ৮ম বিশ্ব ভেটেরিনারি কংগ্রেস এ বিশ্ব ভেটেরিনারিয়ান নেতৃবৃন্দ একটি কমিটি গঠন করে যার মুল উদ্দেশ্য ছিলো নিজেদের মধ্যে সাংগঠনিক যোগাযোগ রক্ষা করা।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আয়োজিত ১৫ তম বিশ্ব কংগ্রেস এ স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন গঠন ও সংবিধান প্রনয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ১৯৫৯ সালে স্পেনের মাদ্রিদে কংগ্রেসে বিশ্ব ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন গঠিত হয়। প্রানি স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা করাই ছিলো যার মুল উদ্দেশ্য। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন বর্তমানে ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন ফর এনিমেল হেলথ ( ও আই ই ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা (ডব্লিও এইচ ও), ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন( এফ এ ও) এর সাথে এক হয়ে সারা বিশ্বে কাজ করছে ।
২০০১ সালে বিশ্ব ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন, ভেটেরিনারি পেশার সাথে কর্মরত সকল ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য একটি বিশেষ দিন আয়োজনের প্রস্তাব গ্রহন করে। যা প্রতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার। মুল লক্ষ্য হলো ভেটেরিনারি পেশাকে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া এবং প্রানি ও মানুষের উন্নয়নে কাজ করা, পরিবেশের উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রানি পরিবহন ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করনে ভুমিকা রাখা।
আরও পড়ুনঃ শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ, চলবে ফ্রি টিকা দান
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস:
দেশে প্রথম ২০০৮ সালে দি ভেট এক্সিকিঊটিভ আয়োজন করে এই দিবসটির । তৎকালীন দি ভেট এক্সিকিঊটিভ এর সেক্রেটারি বর্তমান বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের মহাসচিব ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রচেষ্টায় এ দেশে দিবসটি পালন শুরু হয়।
বর্তমানে কেন্দ্রিয়ভাবে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ), দি ভেট এক্সিকিউটিভ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি স্টুডেন্টস ফেডারেশন (বিভিএসএফ) দিনটিকে সাফল্যমণ্ডিত করতে নানা আয়োজন করে থাকে। কর্মসুচির মধ্যে বর্ন্যাঢ্য শোভাযাত্রা, সেমিনার, বিনামুল্যে প্রানি সেবা ক্যাম্পেইন, সাংস্কৃতিক অনূষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এছাড়া দি ভেট এক্সিকিউটিভ এর পক্ষ থেকে প্রতি বছর ভেটেরিনারি পেশায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ দি ভেট এক্সিকিঊটিভ এওয়ার্ড ও দেওয়া হয়।
বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ) জাতীয় পত্র পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।
সারাদেশের ভেটেরিনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ,দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিভিন্ন আঞ্চলিক ভেট ডক্টরস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি, সহ ভেটেরিনারি পেশার সাথে জড়িত নানা সংগঠন এ দিবস উদযাপনে নানা প্রস্তুতি গ্রহন করে এবং বিভিন্ন কর্মসুচি দেই।
দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে র্যালি, শোভাযাত্রা , প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করে বিনামুল্যে প্রাণির চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান, টিকাদান কর্মসুচি ইত্যাদি আয়োজন করে থাকে।
সর্বশেষ:
এবারে ‘ভেটেরিনারিয়ানগণ অপরিহার্য স্বাস্থ্যকর্মী’ প্রতিপাদ্যের আলোকে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ কনভেনশন হলে আয়োজিত হতে যাচ্ছে ‘বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস- ২০২৪ ইং।’