বর্তমান জীবনের ব্যস্ততার কারণে অনেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য চিনি এড়িয়ে কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করেন। এসব কৃত্রিম মিষ্টি বা ‘আটিফিশিয়াল সুইটেনার’ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, পানীয় এবং ওষুধেও ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, এসব মিষ্টি পণ্যগুলো নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতানৈক্য।
আটিফিশিয়াল সুইটেনার বা কৃত্রিম মিষ্টি হল এমন রাসায়নিক যৌগ, যা প্রাকৃতিক চিনি নয় কিন্তু মিষ্টতার অনুভূতি সৃষ্টি করে। এগুলোর মধ্যে অ্যাসপার্টেম, স্যাকারিন, সুক্রালোজ এবং স্টেভিয়া উল্লেখযোগ্য। এগুলো চিনি থেকে অনেক গুণ বেশি মিষ্টি, তাই অল্প পরিমাণ ব্যবহারেই মিষ্টতার চাহিদা পূরণ হয়। এসব পণ্য সাধারণত কম ক্যালোরিযুক্ত হয়, ফলে ডায়েট এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।
কৃত্রিম মিষ্টি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ডায়েট সফট ড্রিঙ্ক, ক্যান্ডি, চুইংগাম, ডায়াবেটিকদের জন্য বিশেষ খাবার, কম ক্যালোরির খাদ্যপণ্য এবং ফিটনেস সাপ্লিমেন্টে। এতে ওজন কমানো, ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার বাড়ছে।
যদিও কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহারে কিছু উপকারিতা থাকতে পারে, তবে এর সঙ্গে কয়েকটি স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও জটিলতা যুক্ত আছে:
অনেকেই মনে করেন আটিফিশিয়াল সুইটেনার ব্যবহার করলে ওজন কমবে, তবে গবেষণা বলছে অন্য কথা। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম মিষ্টি গ্রহণ করলে শরীরে চিনি গ্রহণের চাহিদা বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে বেশি ক্যালোরি গ্রহণের ঝুঁকি থাকে। এছাড়া, এটি ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বিপাকীয় (মেটাবলিক) সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আটিফিশিয়াল সুইটেনার বা কৃত্রিম মিষ্টির কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সমস্যা হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম মিষ্টি অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, আটিফিশিয়াল সুইটেনার নিয়মিত ব্যবহারের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা স্ট্রোকের সাথে এর সম্পর্ক থাকতে পারে, বিশেষত দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে।
কিছু পুরনো গবেষণায় স্যাকারিনের মতো কৃত্রিম মিষ্টি এবং ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। যদিও আধুনিক গবেষণায় স্যাকারিনের ক্যান্সার সৃষ্টির প্রমাণ মেলেনি, তবে কিছু বিশেষজ্ঞ দীর্ঘমেয়াদে কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহারের ওপর আরো গবেষণার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ লক্ষ্মীপুরে বন্যায় সর্বশান্ত ৩লাখ কৃষক
কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহারে মাথাব্যথা, মেজাজ খারাপ, এবং বিষণ্নতা (ডিপ্রেশন) তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। বিশেষ করে অ্যাসপার্টেমের মতো মিষ্টির প্রভাব নিয়ে গবেষণায় এ ধরণের কিছু ঝুঁকির তথ্য পাওয়া গেছে।
আটিফিশিয়াল সুইটেনার ব্যবহারে ঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষা না করে সচেতন থাকা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রাকৃতিক খাবার ও পানীয় গ্রহণ করাই নিরাপদ। যারা ডায়াবেটিস বা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করছেন, তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং পরিমিতভাবে এসব পণ্য ব্যবহার করা।
আটিফিশিয়াল সুইটেনার বা কৃত্রিম মিষ্টির সুবিধা এবং ঝুঁকি উভয়ই রয়েছে। তাই এসব পণ্য ব্যবহার করার আগে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা এবং খাদ্য ও পানীয়তে চিনির পরিমাণ কমানো স্বাস্থ্যসম্মত এবং নিরাপদ।