ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা যা রক্তে অতিরিক্ত শর্করার (গ্লুকোজ) কারণে ঘটে। এটি সাধারণত দুই প্রকারের হয়: টাইপ ১ এবং টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, আর টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজন সঠিক জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, ওষুধ গ্রহণ, এবং নিয়মিত শরীরচর্চা। আসুন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কিছু কার্যকর উপায় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলাঃ সঠিক ডায়েট পরিকল্পনা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা পালন করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে নিম্নলিখিত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা যেতে পারে:
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবার: কম GI যুক্ত খাবার ধীরে ধীরে রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে, যেমন সবজি, সম্পূর্ণ শস্য, বাদাম, এবং ফলমূল।
প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার: আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, এবং শস্য জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
প্রোটিন যুক্ত খাবার: ডাল, বাদাম, মাছ, ডিম, এবং মুরগির মাংস খাওয়া উচিত। এগুলো ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সহায়ক।
২. নিয়মিত ব্যায়ামঃ শরীরচর্চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, বা সাঁতার কাটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ করাঃ অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ওজন কমানো রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। সঠিক ডায়েট ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
৪. নিয়মিত রক্ত পরীক্ষাঃ নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হোম গ্লুকোমিটার দিয়ে ঘরে বসে রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়াও, চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট সময় পর পর এ১সি (HbA1c) টেস্ট করানো উচিত, যা গড় রক্ত শর্করার মাত্রা জানতে সাহায্য করে।
৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাঃ মানসিক চাপ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য মানসিক চাপ কমানোর উপায়গুলি অনুসরণ করা জরুরি। যোগব্যায়াম, ধ্যান, এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
৬. পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের গ্লুকোজ স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। পানি পান শরীরে অতিরিক্ত শর্করা নির্গত করতে এবং রক্তের শর্করা মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ ওজন কমানোর কার্যকর উপায়: ১০টি সহজ এবং সঠিক পদ্ধতি
কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধ বা ইনসুলিন ব্যবহার প্রয়োজন হতে পারে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন অপরিহার্য, আর টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ওষুধ এবং ইনসুলিন দুটোই ব্যবহৃত হতে পারে। ওষুধ এবং ইনসুলিন ব্যবহারের বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কিছু পরামর্শ
মেথি ও আমলকির ব্যবহার: মেথি বীজ এবং আমলকির রস রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
দারুচিনি এবং মধু: দারুচিনি ও মধুর মিশ্রণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারী হতে পারে। তবে এর ব্যবহার চিকিৎসকের পরামর্শমতো করা উচিত।
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও সঠিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এটি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, এবং ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত চেকআপ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চললে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়।