গর্ভাবস্থায় শরীরের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ও সঠিকভাবে গোসল করা গর্ভবতী মায়ের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। তবে এই সময় পানি ব্যবহারের ধরন, তাপমাত্রা এবং গোসলের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি, কারণ এটি মা ও গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
গোসলের পানির তাপমাত্রা ও নিরাপত্তা: গর্ভাবস্থায় হালকা গরম পানিতে গোসল শরীরের জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে। এটি পিঠ ও মাংসপেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে বেশি গরম পানিতে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গোসলের পানির তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হওয়া উচিত নয়।
গরম পানিতে গোসলের ক্ষতিকর দিক:অত্যধিক গরম পানিতে গোসল করলে গর্ভবতী মায়ের শরীরের তাপমাত্রা ও হার্ট রেট বেড়ে যায়, যা গর্ভের শিশুর রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দিতে পারে। প্রথম তিন মাসে দীর্ঘ সময় ধরে গরম পানিতে গোসল করলে শিশুর নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। গ্রীষ্মকালে দীর্ঘ সময় গরম পানিতে গোসল করলে শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য স্বস্তিকর নয়।
গোসলের সময় সতর্কতা: দীর্ঘ সময় ধরে গোসল না করাই ভালো, কারণ এটি ভ্যাজাইনাল ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গোসলের সময় বাথরুমের মেঝে পিচ্ছিল না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এন্টি-স্লিপ ম্যাট বা রাবারযুক্ত চপ্পল ব্যবহার করা নিরাপদ।
গর্ভবতী নারীদের অনালার্জিক সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত, কারণ এই সময় ত্বক সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।
ভ্যাজাইনাল স্বাস্থ্য রক্ষা: গর্ভাবস্থায় ভ্যাজাইনাল স্বাস্থ্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। pH ব্যালান্স বজায় রাখতে নির্দিষ্ট জেল বা অ্যান্টিসেপটিক পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ বার কাউন্সিল পরীক্ষার ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইবিতে মানববন্ধন
গোসলের পর করণীয়: স্নানের পর তাড়াতাড়ি চুল শুকিয়ে নিতে হবে, কারণ ভেজা মাথা বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
দ্রুত শুকনো ও আরামদায়ক পোশাক পরে নিতে হবে, যাতে তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে ঠান্ডা না লাগে।
ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ময়েশ্চারাইজার বা তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় গোসল সংক্রান্ত সতর্কতা: জল ভাঙার পর গোসল করা এড়িয়ে চলতে হবে। শেষ মাসে গোসলের সময় পায়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে, যাতে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি না থাকে। যদি গরম পানিতে গোসল স্বস্তিদায়ক মনে হয়, তবে অবশ্যই তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় গোসল শুধু পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, এটি শরীর ও মনে স্বস্তি আনতেও সাহায্য করে। তাই কিছু সতর্কতা মেনে চললে এটি আরও বেশি উপকারী হয়ে উঠতে পারে।