আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বর্তমান বিশ্ব এক অদ্ভুত উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই যেন চারপাশে যুদ্ধের গন্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামেনি এখনো, চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা রয়ে গেছে আগের মতো। আর এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য যেন আগুন হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে— তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি তবে এখান থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে?
মধ্যপ্রাচ্য: এক চিরকালীন বারুদের স্তূপ
ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল, প্যালেস্টাইন, ইয়েমেন, সৌদি আরব, ইরান— এই দেশগুলো একে অন্যের সঙ্গে নানা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে বহু বছর ধরেই। ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠী আর ভূরাজনীতির মারপ্যাঁচে কখনোই পুরোপুরি শান্ত হয়নি এই অঞ্চল।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো একেবারে অন্য রকম। গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের ভয়াবহ সংঘর্ষ, ইরান থেকে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া, হুথি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলা, লেবাননে হিজবুল্লাহর সরব প্রস্তুতি— সবকিছু মিলে যুদ্ধ যেন আর এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে।
ইসরায়েল বনাম ইরান: বড় ধাক্কা এখান থেকেই আসবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েল আর ইরান মুখোমুখি হলে সেটি শুধু দুটি দেশের যুদ্ধ থাকবে না। সঙ্গে জড়াবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সৌদি আরব, এমনকি চীনও।
ইরান যদি ইসরায়েলের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে, কিংবা ইসরায়েল ইরানকে ঠেকাতে পরমাণু হামলার ঝুঁকি নেয়, তাহলে পুরো দুনিয়া কেঁপে উঠবে। কারণ, দুই দেশেরই সামরিক শক্তি বিপজ্জনক মাত্রায় উন্নত।
তেলের রাজনীতি: যুদ্ধের আরেক জ্বালানিঃ
মধ্যপ্রাচ্য মানেই তেল। এখানকার যেকোনো সংঘাত পুরো বিশ্বের তেল সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করে। আর তেল মানেই অর্থনীতি। ফলে ইউরোপ, আমেরিকা, চীন— সবাই চায় এই অঞ্চলটা শান্ত থাকুক। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই উল্টো দিকে যাচ্ছে।
বিশেষ করে হরমুজ প্রণালীতে যদি যুদ্ধ শুরু হয়, যেখানে দিয়ে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল যায়, তাহলে সেটি হবে পুরো পৃথিবীর জন্য বড় বিপদ।
ধর্মীয় বিভাজনও দিচ্ছে আগুনে ঘিঃ
শিয়া-সুন্নি বিভাজন, যা ইসলাম ধর্মের একটি মারাত্মক রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে, সেটিও বড় কারণ হয়ে উঠছে। ইরান নেতৃত্ব দিচ্ছে শিয়া ফ্রন্টকে, আর সৌদি আরব সুন্নি ফ্রন্টকে। তাদের দ্বন্দ্ব ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরাকের মতো দেশে রক্তপাত ঘটিয়ে চলেছে।
এদের পেছনে আছে বড় বড় পরাশক্তি— যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন। যার ফলে এসব স্থানীয় যুদ্ধ আর শুধু "স্থানীয়" থাকছে না।
পরমাণু হুমকি: একটিই ভুল পুরো দুনিয়া শেষ করতে পারেঃ
ইসরায়েল পরমাণু শক্তিধর দেশ, যদিও তারা কখনো খোলাখুলি তা বলেনি। ইরানও নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম নিয়ে এগিয়ে চলেছে, যা নিয়ে পশ্চিমারা উদ্বিগ্ন।
এই দুটি দেশের মধ্যে যদি পরমাণু অস্ত্র নিয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়, কিংবা সরাসরি হামলা হয়, তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেবল "সম্ভাবনা" থাকবে না— বাস্তবতা হয়ে যাবে।
বিশ্ব শক্তিগুলোর ভূমিকাই নির্ধারণ করবে সবঃ
যুক্তরাষ্ট্র: ইসরায়েলের পক্ষে আছে। প্রতিক্রিয়ায় যুদ্ধ জড়াতে পারে।
রাশিয়া: ইরান ও সিরিয়ার দিকে ঝুঁকে আছে।
চীন: মাঝামাঝি থেকে ভারসাম্য রাখতে চায়, তবে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ।
ইউরোপ: শান্তি চায়, তবে জ্বালানি সংকট ও অভিবাসী সমস্যা তাদের মাথাব্যথা।
বিশ্ব এখন দুই ভাগে বিভক্ত হতে চলেছে। একপাশে পশ্চিমা জোট, আরেক পাশে রাশিয়া-চীন-ইরান ঘরানা।
আরও পড়ুনঃ ভালুকায় খেলনা পিস্তল দেখিয়ে চাঁদাবাজির চেষ্টা, দুই কিশোর আটক
তাহলে কি যুদ্ধ অনিবার্য?
তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ—
তবে এটুকু স্পষ্ট— মধ্যপ্রাচ্য একটি দাহ্য অবস্থায় রয়েছে। একটু উসকানি, একটা ভুল সিদ্ধান্ত, একটি অকাল হামলা— আর বাকি ইতিহাস হতে সময় লাগবে না।
সতর্ক হও, সচেতন থাকোঃ
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এখনও শুরু হয়নি, কিন্তু তার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কেউ বলছেন এটা মিডিয়ার সৃষ্টি আতঙ্ক, কেউ বলছেন এটাই বাস্তবতা। তবে সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন— শান্তির বিকল্প নেই।
আর বিশ্বের নেতৃবৃন্দ যদি সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত না নেন, তাহলে আগামী ইতিহাসে হয়তো লেখা থাকবে— “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের বালুপ্রান্তর থেকেই।”