spot_img

― Advertisement ―

spot_img

ঈদ-উল-ফিতর: সংযম, আনন্দ ও মানবতার বন্ধন

ফিচার ডেস্কঃ ঈদ-উল-ফিতর আমাদের জীবনে খুশির বার্তা নিয়ে আসে, তবে এর মূল তাৎপর্য নিহিত আছে পারস্পরিক ভালোবাসা, সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্যে। এটি আমাদের শেখায়,...
প্রচ্ছদইসলাম ও জীবন ব্যবস্থাশবে বরাতের ফজিলত ও করণীয়: ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

শবে বরাতের ফজিলত ও করণীয়: ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ রাত। শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ বা ‘মধ্য শাবানের রজনী’ বলা হয়। হাদিসে এসেছে, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক (অংশীবাদী) ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করেন।

শবে বরাতের ফজিলতঃ শবে বরাত সম্পর্কে বিভিন্ন সহিহ ও গ্রহণযোগ্য হাদিস পাওয়া যায়, যেখানে এই রাতের বিশেষত্ব বর্ণিত হয়েছে।

১. আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শাবান মাসের পনেরতম রাতে আল্লাহ দুনিয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। তিনি মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করেন।” (ইবনে মাজাহ: ১৩৯০)

২. রিজিক ও তাকদির নির্ধারণ: অনেক হাদিস মতে, শবে বরাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। কার মৃত্যু হবে, কার রিজিক বৃদ্ধি বা সংকোচন হবে—এসব বিষয় নির্ধারিত হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

শবে বরাতে করণীয় ইবাদতঃ শবে বরাতে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে যা রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবারা করতেন।

১. নফল নামাজঃ শবে বরাতে আলাদা কোনো নির্দিষ্ট নামাজ নেই। তবে সাধারণ নফল নামাজ পড়া উত্তম। কেউ চাইলে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন। দু’রাকাত করে নামাজ পড়া এবং কুরআন তিলাওয়াত করা ভালো।

২. আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাঃ আল্লাহর কাছে নিজের ও সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করা উচিত। শবে বরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই, তবে রাসূল (সা.) রজব ও শাবান মাসে এই দোয়া করতেন:
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শা’বানা, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাস বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৪৬)

৩. কবর জিয়ারতঃ রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবানের ১৪ তারিখ রাতে কবরস্থানে গিয়ে মাগফিরাতের দোয়া করতেন।
মুসলমানরা এই রাতেও মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করতে পারেন।

৪. কুরআন তিলাওয়াত ও তাসবিহঃ শবে বরাতে কুরআন তিলাওয়াত এবং আল্লাহর জিকির করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
সূরা ইয়াসিন পাঠ করা যেতে পারে। “সুবহানাল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”, “আল্লাহু আকবার” ইত্যাদি জিকির করা উত্তম।

আরও পড়ুনঃ ইসলামে গাজওয়াতুল হিন্দ কি?

৫. রোজা রাখাঃ রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন। (বুখারি, মুসলিম) শবে বরাতের পরদিন (১৫ শাবান) নফল রোজা রাখা যেতে পারে।

যেসব কাজ এড়িয়ে চলা উচিতঃ শবে বরাত নিয়ে কিছু কুসংস্কার ও ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। শবে বরাতে বিশেষ কোনো নামাজের নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। এই রাতে আতশবাজি ফোটানো বা আনন্দ উৎসব করা ইসলামে অনুমোদিত নয়। মিলাদ, কিয়াম, বিশেষ মিষ্টান্ন তৈরি ও বিতরণ করা বাধ্যতামূলক নয়। গণহারে মসজিদে বিশেষ দোয়া আয়োজন করা রাসূল (সা.) বা সাহাবিদের আমলে ছিল না।

শবে বরাত ইসলামে একটি বরকতময় রাত। এটি আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রাত। তবে এই রাতের কোনো ইবাদতকে বাধ্যতামূলক মনে করা যাবে না। কুরআন-হাদিসে বর্ণিত আমলগুলো পালন করাই উত্তম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে বরাতের ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন।