spot_img

― Advertisement ―

spot_img

সাগর কন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

মোঃ তরিকুল মোল্লা, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য গন্তব্য কুয়াকাটা, পটুয়াখালী জেলার একটি বিস্ময়কর সমুদ্র সৈকত, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র...
প্রচ্ছদইসলাম ও জীবন ব্যবস্থাইসলাম বলে সাহায্য করুন জালেম ও মাজলুম কে

ইসলাম বলে সাহায্য করুন জালেম ও মাজলুম কে

জালেম ও মাজলুম দুটি শব্দ একে অপরের পুরোপুরি বৈপরিত্যমূলক। ‘মজলুম’ শব্দের অর্থ অত্যাচারিত, উৎপীড়িত, নিঃসহায় বা সহায়হীন অর্থাৎ অসহায় ব্যাক্তি। অপরদিকে যে ব্যক্তি জুলুম করে, তাকে জালিম বলে। সমাজে চলার পথে আমরা যেমন মাজলুম ব্যাক্তিদের আর্তনাদ শুনতে পাই, ঠিক একই ভাবে জালেমের অট্টহাসি শুনে থাকি। দুনিয়ায় কেউ হয়তো সারাজীবন মাজলুম হিসেবেই থেকে যায় আবার কেউ জালেম হিসেবে দুনিয়ার অধিপতি বনে যায়। তবে ইসলাম কি বলে মাজলুম ও জালেমের ব্যাপারে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি কারুন, ফেরাউন ও হামানকে ধ্বংস করেছিলাম। মূসা তাদের কাছে উজ্জ্বল নিদর্শন নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা ভূমিতে দম্ভ করল, তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি। তাদের প্রত্যেককেই আমি তার পাপের কারণে পাকড়াও করেছিলাম; তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচণ্ড বাতাস, কাউকে আঘাত করেছিল মহানাদ, কাউকে আমি ধসিয়ে দিয়েছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি কোনো জুলুম করেননি; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল’ (সূরা আনকাবুত : ৩৯-৪০)।

আল্লাহ তায়ালা জুলুমকারীকে সঙ্গে সঙ্গে পাকড়াও করেন না; বরং তিনি সুযোগ দেন। তিনি বলেন, ‘তুমি কখনও মনে করো না যে, জালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ ‘গাফিল’ তবে তিনি ওদের সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন তাদের চক্ষু হবে স্থির। ভীত-বিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে ওরা ছুটাছুটি করবে, নিজেদের প্রতি ওদের দৃষ্টি ফিরিবে না এবং ওদের অন্তর হবে উদাস।’ (সুরা ইবরাহিম : ৪২-৪৩)।

আরও পড়ুনঃ আজ ১৭ রমাদান ঐতিহাসিক বদর দিবস

মাজলুম ব্যক্তি জালেমের জুলুম সম্পর্কে অন্যদের বলতে পারবে। তার জুলুম থেকে অন্যদের সতর্ক করার জন্য কিংবা নিজে সহযোগিতা চাওয়ার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘মন্দ কথার প্রচারণা আল্লাহ পছন্দ করেন না; তবে যার উপর জুলুম করা হয়েছে সে ব্যতীত। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নিসা: ১৪৮)।

সকল মুসলমান এক দেহের মতো। দেহের কোনো অঙ্গ আক্রান্ত হলে গোটা দেহে ব্যথা অনুভূত হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,“যে ব্যক্তি এমন স্থানে অপর মুসলিমের সাহায্য পরিত্যাগ করে, যেখানে তার সম্ভ্রম-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করা থেকে বিমুখ থাকবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের সম্ভ্রম-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার স্থানে তাকে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য প্রত্যাশা করে। (সুনানে আবু দাউদ-৪৮৮৪, মুসনাদে আহমাদ-১৬৩৬৮)।

এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে নিজে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে ব্যাক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে ও বিপদে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন ও তকেও বিপদে সাহায্য করবে। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (সহিহ বুখারী-২৪৪২)।

মুসলিমরা যদি আল্লাহর কোনো বান্দাকে মাজলুম হতে দেখেও জালিমকে প্রতিহত না করে, তাহলে আল্লাহ তাদের সকলকে আজাবে নিপতিত করবেন এবং মাজলুম ব্যাক্তিকে সহায়তা না করায় তারা নিজেরাও জালিম বলে বিবেচিত হবে। রাসুল (সাঃ) বলেন,“মানুষ যদি কোনো অত্যাচারীকে অত্যাচারে লিপ্ত দেখেও তার দু-হাত চেপে ধরে তাকে প্রতিহত না করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা অতি শীঘ্রই তাদের সকলকে তার ব্যাপক শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত করবেন। (সুনানে তিরমিজি -২১৬৮, সুনানে আবু দাউদ -৪৩৩৮)।

মাজলুমের করুণ আর্তনাদ ও ব্যথাতুর ফরিয়াদ বৃথা যায় না। মজলুম জালেমের বিরুদ্ধে কোন বদদোয়া করলে, আল্লাহ তা দূত কবুল করে নেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) কে ইয়ামানে শাসক নিয়োগ করে পাঠানোর সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন, ‘মাজলুমের বদদোয়াকে ভয় করবে। কেননা, তার এবং আল্লাহর মধ্যে কোন কোন পর্দা থাকে না।” (সহিহ বুখারি: ১৪৯৬)।

অপর এক হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না; ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং মাজলুমের দোয়া। কিয়ামতের দিন আল্লাহ রব্বুল আলামীন তা মেঘমালার ওপর তুলে রাখবেন এবং তার জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে। আর আল্লাহ বলবেন, আমার ইজ্জতের কসম, একটু পরে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব। (ইবনে মাজাহ : ১৭৫২)।

সর্বোপরি, আমাদের উচিত জুলুম থেকে আত্মরক্ষা করা। আর জালেমকে তার জুলুম থেকে বিরত রেখে সর্বাত্মক চেষ্টা করা এবং মাজলুম ব্যাক্তিকে সার্বিকভাবে সাহায্য করা। এই ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তুমি তোমার ভাইকে সাহয্য করো, সে জালেম হোক বা মাজলুম। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, মজলুমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু জালিমকে কী করে সাহায্য করব? তিনি বলেন, তুমি তার হাত ধরে তাকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে। ( সহিহ বুখারি: ২৪৪৪)। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হেফাজত করুন।

লেখক:
মাহিদুজ্জামান সিয়াম,
সদস্য, ইসলামি পাঠাগার সাহাপাড়া বাজার।