আমাদের দেশে এক সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে কুরবানীর সময় অবৈধ পন্থায়ী প্রচুর গরু আসতো।গুলোকে চোরাই গরু বলা হতো। তবে বর্তমানে দেশিও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের ফলে দেশের গরু দিয়ে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ সম্ভবত হচ্ছে। এরপরেও চোরাই গরু/পশু দিয়ে কুরবানী করার বিধান কি হবে সে নিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মনে প্রশ্ন উঠতো। প্রশ্ন উঠে সুদ-ঘুষের টাকায় কুরবানী নিয়ে ইসলাম কি বলে?
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন কর্তিক পরিচালিত ইসলামী প্রশ্নোত্তর ইউটিউন চ্যানেলে শায়েখ আহমাদুল্লাহ কে যখন এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় উনি উত্তর দেন-
ভারত থেকে আগত গরু গুলো যদি প্রকৃতঅর্থে কারো থেকে চুরি করে আনা হয় তাহলে সেই পশুর কুরবানী বৈধ হবে না। তবে যদি গরু গুলো বৈধ হয়, শুধু দেশিও ট্যাক্স বা আইন-কানুন না মেনে আনার কারণে সেগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে চোরাই হিসেবে গণ্য হলেও প্রকৃতঅর্থে চোরাই নই। সেই পশু গুলোর কুরবানী বৈধ হবে। তবে আমাদের দেশের আইন-কানুন মেয়ে চলবো।
অপরদিকে প্রকৃতঅর্থে চুরিকৃত বা সুদ-ঘুষের টাকায় কেনা পশুর কুরবানী করার বিষয়েও রয়েছে মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন। আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানীর লিখিত ও তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত কুরবানীর বিধান বইতে শায়েখ লিখেন-
কুরবানী সিদ্ধ হওয়ার তৃতীয় শর্ত হল মালিকানা। অর্থাৎ, কুরবানীদাতা যেন বৈধভাবে ঐ পশুর মালিক হয়। সুতরাং চুরিকৃত, আত্মসাৎকৃত অথবা অবৈধ ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রীত পশুর কুরবানী সিদ্ধ নয়। তদনুরূপ অবৈধ মূল্য (যেমন সূদ, ঘুস, প্রবঞ্চনা প্রভৃতির অর্থ) দ্বারা ক্রীত পশুর কুরবানীও জায়েয নয়।
আরও পড়ুনঃ জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয়
যেহেতু কুরবানী এক ইবাদত যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা হয়। আর কুরবানীর পশুর মালিক হওয়ার ঐ সমস্ত পদ্ধতি হল পাপময়। আর পাপ দ্বারা কোন প্রকার নৈকট্য লাভ সম্ভব নয়। বরং তাতে দূরতক্ষ সৃষ্টি হয়। রাসুল (সাঃ), ‘‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতীত কিছু গ্রহণ করেন না” (সহীহ মুসলিম: ১০১৫)।
তিনি আরও লিখেন, কুরবানীর পশু নির্ধারণে মুসলিমকে সবিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত, যাতে পশু সর্বগুণে সম্পূর্ণ হয়। যেহেতু এটা আল্লাহর নিদর্শন ও তা’যীমযোগ্য দ্বীনী প্রতীকসমূহের অন্যতম। যা আত্মসংযম ও তাকওয়ার পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা বলেন, “এটিই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীর সম্মান করলে এতো তার হূদয়ের তাকওয়া তথা ধর্মনিষ্ঠা” (সূরা হজ্জ: ৩২)।
লেখক:
মাহিদুজ্জামান সিয়াম
সদস্য, ইসলামী পাঠাগার সাহাপাড়া বাজার।