
রমজান মাসে রোজা রাখা মুসলিম নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে দুধ পান করানো মায়েদের ক্ষেত্রে শরীরের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, কারণ তাদের পুষ্টি সরবরাহ শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং শিশুর জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোজার কারণে খাবার ও পানীয় গ্রহণের সময় সীমিত হওয়ায় মায়েদের অবশ্যই সঠিক উপায়ে নিজেদের যত্ন নিতে হবে, যাতে তারা সুস্থ থেকে শিশুর পর্যাপ্ত দুধ নিশ্চিত করতে পারেন।
রোজায় মায়ের জন্য পুষ্টি ও পানির গুরুত্বঃ
দুধ পান করানো মায়েদের শরীরের পানির চাহিদা সাধারণের তুলনায় বেশি থাকে। রোজার কারণে দীর্ঘ সময় পানি ও খাবার না খাওয়ার ফলে ডিহাইড্রেশন ও পুষ্টির ঘাটতির ঝুঁকি দেখা দিতে পারে, যা দুধ উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই মায়েদের উচিত সাহরি ও ইফতারে যথাযথ খাবার গ্রহণ করা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা।
সাহরিতে কী খাবেন?
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: ডিম, দুধ, দই, মাছ, মাংস ও বাদামজাতীয় খাবার শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে।
ধীর পাচ্য কার্বোহাইড্রেট: ওটস, লাল আটার রুটি, শাকসবজি ও ডাল দীর্ঘ সময় শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
পর্যাপ্ত পানি: সাহরিতে অন্তত ৩-৪ গ্লাস পানি পান করা জরুরি, যাতে সারাদিন ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি কম থাকে।
ইফতারে কী খাবেন?
প্রচুর পানি ও হালকা খাবার: ইফতার শুরু করুন খেজুর ও পানি দিয়ে, এরপর ফলের রস বা শরবত খেতে পারেন।
প্রোটিন ও ফ্যাট: মাছ, মাংস, ডাল ও বাদামজাতীয় খাবার খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
শাকসবজি ও ফল: এগুলো ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ করবে এবং হজমে সহায়ক হবে।
দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার: ইফতারের পর এক গ্লাস দুধ বা লাচ্ছি পান করলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং দুধ উৎপাদন ঠিক থাকবে।
দুধ উৎপাদন কমে গেলে করণীয়ঃ
পানি কম পান করলে দুধ উৎপাদন কমে যেতে পারে, তাই ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
খুব ক্লান্ত লাগলে বা দুধের পরিমাণ কমে গেলে রোজা ভেঙে ফেলা ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ।
যদি মনে হয় রোজা রাখলে শিশুর পুষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটছে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা পরবর্তী সময়ে কাজা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় গোসলের যত্ন: নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
কোন লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে?
শরীর খুব দুর্বল লাগলে বা মাথা ঘুরলে।
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, যা ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ।
শিশুর প্রস্রাব কম হলে বা সে পর্যাপ্ত দুধ না পেলে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শঃ
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধ পান করানো মায়েরা রোজা রাখতে চাইলে অবশ্যই নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রয়োজন হলে রোজার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকতে পারেন।
রমজানে দুধ পান করানো মায়েদের উচিত নিজেদের সুস্থতা নিশ্চিত করে সচেতনতার সঙ্গে রোজা রাখা। সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত পানি ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণের মাধ্যমে রোজা রেখে মাতৃত্বের দায়িত্বও পালন করা সম্ভব।