মোঃ আসিফুজ্জামান আসিফ, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ আওয়ামী লীগের অর্ধ-ডজন কেন্দ্রীয় নেতা একান্ত আলাপচারিতায় বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের আন্দোলন হঠাৎ করেই দানা বেঁধেছিল। শেষ পর্যন্ত সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে বাধ্য হয়। আবার সেই কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হওয়ায় ফের হঠাৎ করেই কোটা আন্দোলনে নেমেছে ছাত্ররা।
তারা বলছেন, এবার একইসঙ্গে চলছে দুটি আন্দোলন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি দিয়েছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, যাতে সমর্থন দিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরাও। কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়টি আদালতের ব্যাপার হওয়ায় কঠোর অবস্থানে যেতে চাইছে না সরকার। আবার আন্দোলনও ছড়িয়ে পড়ছে। এখন আদালতের রায় নিয়ে নির্বাহী বিভাগ কোনও সিদ্ধান্তও দিতে পারছে না, আন্দোলন দমনও করতে পারছে না। সে কারণে আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। একই সময়ে শিক্ষকদের আন্দোলনও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উভয় আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দেওয়ায় আন্দোলনে সহিংসতার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। সেজন্য ছাত্রলীগকে মাঠে নামতে বারণ করা হয়েছে। সময় নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন আমরা দেখেছি। সরকার বিষয়টি সমাধান করেছে। এখন কোটা পুনর্বহাল তো সরকার করেনি, করেছে আদালত। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে আবার। বিষয়টি নিয়ে আমাদের নেত্রী তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদকও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এখন কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে বিএনপি কলকাঠি নাড়তে পারে।চলমান আন্দোলনে তারা সমর্থন দেওয়ায় সেই ধারণা প্রবল হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত যদি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চায়, তবে পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আন্দোলনের নামে দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। কোনও ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সফল হবে না, হতে দেওয়া হবে না। আমরা ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
ছাত্রলীগের সহসভাপতি খাদেমুল বাশার জয় বলেন, কোটা আন্দোলনের প্রতি আমরা তীক্ষ্ণ নজর রাখছি। আন্দোলনের নামে পরিস্থিতি অশান্ত করে তোলার চেষ্টা হলে ছাত্রলীগ তার করণীয় ঠিক করবে। বিএনপি-জামায়াত যাতে এই পরিস্থিতির ফায়দা লুটতে না পারে এ জন্য আমরা সতর্ক আছি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকাসহ সারা দেশে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। তখন ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। আন্দোলনের মুখে ওই বছরই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ওই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেন আদালত। পাশাপাশি মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়।
এদিকে আপিল বিভাগের আদেশের আগেই গত ২ জুলাই থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত); সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন এবং সম্পাদকমণ্ডলীর দুই জন সদস্য জানান, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ মাঠে নামলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। ত্রিমুখী সংঘর্ষের ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার জটিলতা এড়াতে সংযমী আচরণ করছে।আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করা হবে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ে।
নেতারা বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত না দিয়ে যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও দলের অবস্থান জানিয়েছেন। এই আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দিয়ে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (৮ জুলাই) সরকারি সফরে চীন যাচ্ছেন, ফিরবেন ১১ জুলাই। সেই পর্যন্ত পর্দার অন্তরালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলতে পারে, অন্যদিকে আন্দোলনও চলতে পারে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর হয়তো বিষয়টি সুরাহার দিকে যেতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন কোটার বিষয়টি সমাধান হয়েছিল। সেটি নিয়ে মামলা হওয়ায় আদালতের রায় এসেছে। এর বিরুদ্ধে আবার শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যায় সমাধান হলে ভালো হয়। তবে সেই ধরনের বিচক্ষণ, উপযুক্ত ছাত্রনেতার অভাব রয়েছে। তা ছাড়া সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে কৌশলে সমস্যা তৈরির চেষ্টা কোনও মহল করছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার।
রবিবার (৭ জুলাই) গণভবনে যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি কোটা আন্দোলন! আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা, সেটা বাতিল করতে হবে, নারীদের কোটা বাতিল করতে হবে, অমুক-তমুক। সেটা একবার বাতিল করা হয়েছিল। আমার প্রশ্ন, যারা এর আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিল, তারা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে কতজন পরীক্ষা দিয়েছিল? কতজন পাস করেছিল? সেই হিসাবটা বের করা দরকার। তারা দেখাক পরীক্ষা দিয়ে বেশি পাস করেছিল, মেয়েরা বেশি পাস করে বেশি চাকরি পেয়েছে কিনা, সেটা আগে তারা প্রমাণ করুক।
কোটা বাতিলের ফলাফল নিয়ে তিনি বলেন, ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশনের হিসাবে, পরীক্ষায় আগে যেখানে কোটা থাকতো, মেয়েরা যে পরিমাণ সুযোগ পেতো, সেই পরিমাণ সুযোগ এ কয়েক বছরে পায়নি। এটা হলো বাস্তবতা। এমনকি অনেক জেলা, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত থেকে গেছে। তারাও চাকরি পাচ্ছে না। বঞ্চিত হওয়ার কেউ মামলা করলে…। হাইকোর্ট একটা রায় দেন। হাইকোর্টের রায় আমরা সবসময় মেনে নিই। আমরা দেখলাম এখন আবার কোটাবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন, মেয়েরাও করছে!
সরকারপ্রধান বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন… এটা তো বিচারাধীন বিষয়। আমরা সরকারে থেকে কথা বলতে পারি না। হাইকোর্ট রায় দিলে সেখান থেকেই আসতে হবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে পড়াশোনা-সময় নষ্ট করার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।
শনিবার (৬ জুলাই) রাজধানীর বেইলি রোডে এক অনুষ্ঠানে চলমান আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এখন শিক্ষকদের আন্দোলনের ওপর ভর করবে। আবার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করবে। বিএনপি খালেদা জিয়াকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে আন্দোলনের ইস্যু খুঁজছে।
এদিকে, রবিবার (৭ জুলাই) বাংলা ব্লকড কর্মসূচি পালনের পর রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট চলবে। পাশাপাশি বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিও চলবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চলছে। এই ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলছেন, আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে এটি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা যুক্ত হয়ে এটাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারে।
আওয়ামী লীগের অর্ধ-ডজন কেন্দ্রীয় নেতা একান্ত আলাপচারিতায় বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের আন্দোলন হঠাৎ করেই দানা বেঁধেছিল। শেষ পর্যন্ত সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে বাধ্য হয়। আবার সেই কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হওয়ায় ফের হঠাৎ করেই আন্দোলনে নেমেছে ছাত্ররা।
আরও পড়ুনঃ কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে সময় নষ্ট করার যৌক্তিকতা নেই: প্রধানমন্ত্রী
তারা বলছেন, এবার একইসঙ্গে চলছে দুটি আন্দোলন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি দিয়েছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, যাতে সমর্থন দিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরাও। কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়টি আদালতের ব্যাপার হওয়ায় কঠোর অবস্থানে যেতে চাইছে না সরকার। আবার আন্দোলনও ছড়িয়ে পড়ছে।
এখন আদালতের রায় নিয়ে নির্বাহী বিভাগ কোনও সিদ্ধান্তও দিতে পারছে না, আন্দোলন দমনও করতে পারছে না। সে কারণে আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। একই সময়ে শিক্ষকদের আন্দোলনও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উভয় আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দেওয়ায় আন্দোলনে সহিংসতার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। সেজন্য ছাত্রলীগকে মাঠে নামতে বারণ করা হয়েছে। সময় নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন আমরা দেখেছি। সরকার বিষয়টি সমাধান করেছে। এখন কোটা পুনর্বহাল তো সরকার করেনি, করেছে আদালত। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে আবার। বিষয়টি নিয়ে আমাদের নেত্রী তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদকও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এখন কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে বিএনপি কলকাঠি নাড়তে পারে।চলমান আন্দোলনে তারা সমর্থন দেওয়ায় সেই ধারণা প্রবল হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত যদি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চায়, তবে পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আন্দোলনের নামে দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। কোনও ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সফল হবে না, হতে দেওয়া হবে না। আমরা ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছি, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
ছাত্রলীগের সহসভাপতি খাদেমুল বাশার জয় বলেন, কোটা আন্দোলনের প্রতি আমরা তীক্ষ্ণ নজর রাখছি। আন্দোলনের নামে পরিস্থিতি অশান্ত করে তোলার চেষ্টা হলে ছাত্রলীগ তার করণীয় ঠিক করবে। বিএনপি-জামায়াত যাতে এই পরিস্থিতির ফায়দা লুটতে না পারে এ জন্য আমরা সতর্ক আছি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকাসহ সারা দেশে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। তখন ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। আন্দোলনের মুখে ওই বছরই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
পরে ওই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেন আদালত। পাশাপাশি মামলার শুনানি মুলতবি রাখা হয়।
এদিকে আপিল বিভাগের আদেশের আগেই গত ২ জুলাই থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত); সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন এবং সম্পাদকমণ্ডলীর দুই জন সদস্য জানান, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ মাঠে নামলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। ত্রিমুখী সংঘর্ষের ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার জটিলতা এড়াতে সংযমী আচরণ করছে।আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করা হবে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ে।
নেতারা বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত না দিয়ে যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও দলের অবস্থান জানিয়েছেন। এই আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দিয়ে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (৮ জুলাই) সরকারি সফরে চীন যাচ্ছেন, ফিরবেন ১১ জুলাই। সেই পর্যন্ত পর্দার অন্তরালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলতে পারে, অন্যদিকে আন্দোলনও চলতে পারে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর হয়তো বিষয়টি সুরাহার দিকে যেতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন কোটার বিষয়টি সমাধান হয়েছিল। সেটি নিয়ে মামলা হওয়ায় আদালতের রায় এসেছে। এর বিরুদ্ধে আবার শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যায় সমাধান হলে ভালো হয়। তবে সেই ধরনের বিচক্ষণ, উপযুক্ত ছাত্রনেতার অভাব রয়েছে। তা ছাড়া সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে কৌশলে সমস্যা তৈরির চেষ্টা কোনও মহল করছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার।
রবিবার (৭ জুলাই) গণভবনে যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি কোটা আন্দোলন! আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা, সেটা বাতিল করতে হবে, নারীদের কোটা বাতিল করতে হবে, অমুক-তমুক। সেটা একবার বাতিল করা হয়েছিল। আমার প্রশ্ন, যারা এর আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিল, তারা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে কতজন পরীক্ষা দিয়েছিল? কতজন পাস করেছিল? সেই হিসাবটা বের করা দরকার। তারা দেখাক পরীক্ষা দিয়ে বেশি পাস করেছিল, মেয়েরা বেশি পাস করে বেশি চাকরি পেয়েছে কিনা, সেটা আগে তারা প্রমাণ করুক।
কোটা বাতিলের ফলাফল নিয়ে তিনি বলেন, ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশনের হিসাবে, পরীক্ষায় আগে যেখানে কোটা থাকতো, মেয়েরা যে পরিমাণ সুযোগ পেতো, সেই পরিমাণ সুযোগ এ কয়েক বছরে পায়নি। এটা হলো বাস্তবতা। এমনকি অনেক জেলা, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বঞ্চিত থেকে গেছে। তারাও চাকরি পাচ্ছে না। বঞ্চিত হওয়ার কেউ মামলা করলে। হাইকোর্ট একটা রায় দেন। হাইকোর্টের রায় আমরা সবসময় মেনে নিই। আমরা দেখলাম এখন আবার কোটাবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন, মেয়েরাও করছে!
সরকারপ্রধান বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন… এটা তো বিচারাধীন বিষয়। আমরা সরকারে থেকে কথা বলতে পারি না। হাইকোর্ট রায় দিলে সেখান থেকেই আসতে হবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে পড়াশোনা-সময় নষ্ট করার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।
শনিবার (৬ জুলাই) রাজধানীর বেইলি রোডে এক অনুষ্ঠানে চলমান আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এখন শিক্ষকদের আন্দোলনের ওপর ভর করবে। আবার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করবে। বিএনপি খালেদা জিয়াকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে আন্দোলনের ইস্যু খুঁজছে।
এদিকে, রবিবার (৭ জুলাই) বাংলা ব্লকড কর্মসূচি পালনের পর রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট চলবে। পাশাপাশি বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিও চলবে।