
শেখ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সাভার প্রতিনিধিঃ আল্লাহর ভয় ছাড়া ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়— মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট মসিউল আলম।
শুক্রবার (৪ জুলাই) কেরানীগঞ্জের জয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা জেলা (উত্তর) শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিশাল কর্মী সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও থানা আমীর আব্দুর রহিম মজুমদার এবং সঞ্চালনায় ছিলেন থানা সেক্রেটারি শহীদুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট মসিউল আলম বলেন, “জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকে কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে হবে, বিশেষ করে ফজরের নামাজ জামায়াতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। আল্লাহর ভয় থাকলেই ন্যায়ের পথে থাকা সম্ভব। যারা কুরআনের আলোকে জীবন পরিচালনা করে, তারা মানুষের দায়িত্বও সঠিকভাবে পালন করে।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করাও ছিল দুঃসাধ্য। মানুষকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো। তবে এখন কিছুটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। জামায়াতের কর্মীরা ষড়ঋতুর মতো সময় পার করে—বর্তমান সময়টা যেন বসন্তের মতো।”
বিগত শাসকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “জুলাই মাসে একটি জালিম সরকারের পতন ঘটেছিল। বর্তমানে তার মাসতুতো ভাইরাও সক্রিয়। এদের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে, নিপাত ঘটাতে হবে। আমাদের স্লোগান হতে হবে— ‘ফ্যাসিবাদ আর ধান্দাবাজ নিপাত যাক, ধ্বংস হোক।’”
সম্মেলনের প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা জেলা আমীর মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন বলেন, “বিগত ৫৩ বছরে এদেশে বিভিন্ন দল ক্ষমতায় থাকলেও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। বরং দেশকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। এখন সময় এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার।”
তিনি আরও বলেন, “জামায়াতকে বাধা দিয়ে, নিবন্ধন বাতিল করে দমিয়ে রাখা যায়নি। জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, জনগণের সমর্থনে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই দেশ হবে ইসলামের দেশ, ইসলামী সরকার গঠিত হবে। আমরা জামায়াত নয়, ইসলামকে ক্ষমতায় দেখতে চাই।”
তিনি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার, শহীদ-আহত পরিবার পুনর্বাসন, মৌলিক সংস্কার, সবার জন্য সমান সুযোগ এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান।
আরও পড়ুনঃ নালিতাবাড়ীতে রাতভর বালুবাহী ট্রাকে প্রশাসনের অভিযান: ৯ জনকে কারাদণ্ড, ৯টি ট্রাক জব্দ
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা-১৯ আসনের এমপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা মো. আফজাল হোসাইন বলেন, “একটি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের জন্য জামায়াতের প্রার্থীদের বিজয়ী করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যেককে একেকজন প্রার্থী হিসেবে কাজ করতে হবে।”
সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে আব্দুর রহিম মজুমদার বলেন, “সমাজের প্রতিটি স্তরে দাওয়াতি কাজ জোরদার করতে হবে। পাড়া-মহল্লায়, গ্রামেগঞ্জে সবাইকে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।”
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৩ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহীনুর ইসলাম, ঢাকা-২ আসনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার তৌফিক হাসান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য কাজী বেলাল উদ্দীন, থানার নায়েবে আমীর মো. ইলিয়াস, বায়তুলমাল সেক্রেটারি জহিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতিতে সম্মেলনটি ছিল একটি বিশাল জনসমাবেশে পরিণত, যেখানে দৃপ্ত শপথ ছিল—ইসলামী সমাজ ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার।