
মোহাম্মদ ইসমাইল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ “যারা ভোট চান না, তাদের রাজনৈতিক দল করার দরকার কী?”—এমন প্রশ্ন রেখে বর্তমান রাজনীতির চিত্রকে তীব্রভাবে সমালোচনা করলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শনিবার (১৯ জুলাই) নগরীর লালখান বাজার সংলগ্ন লেডিস ক্লাবে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র চান না, অথচ রাজনৈতিক দল করবেন—এটা তো পরস্পরবিরোধী। জনগণের কাছে না গিয়ে, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে কীভাবে নিজেকে রাজনৈতিক শক্তি বলা যায়?”
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক ও বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টিপু এবং পরিচালনায় ছিলেন সদস্য সচিব মো. মোবারক আলী ও খন্দকিয়া চিকনদন্ডী স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহিদা আক্তার।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া। এছাড়াও সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মো. জাকির হোসেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, শিক্ষক নেতা এম. এ. ছফা চৌধুরী, হোসাইনুল ইসলাম মাতব্বরসহ বিভিন্ন উপজেলা ও জেলার শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে আমীর খসরু বলেন, “বর্তমান সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যক্তি, পরিবার ও দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। শিক্ষা হবে জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার—সেটি আজ উপেক্ষিত। একজন শিক্ষক সমাজের মূল্যবান অংশ। কিন্তু তারা আর্থিকভাবে যেমন অবহেলিত, সামাজিকভাবেও তাদের সম্মান কমে গেছে। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকদের বেতন-ভাতায় বৈষম্য, সিলেবাসে এক হলেও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের ব্যবধান—এগুলো অযৌক্তিক। শিক্ষার এই সংকট রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফসল।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ একটি নির্বাচিত সরকার চায়। নির্বাচনের বাইরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দল নয়, তাদের কাজ নির্বাচন আয়োজন করা। জনগণের ভোটে গঠিত সরকারই হবে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার।”
আরও পড়ুনঃ আশুলিয়ায় বিএনপি নেতা ডঃ আসাদুল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ, নেতাকর্মীদের ক্ষোভ
তিনি বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়তে হলে পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। এই পরিবর্তনের রূপরেখা দিয়েছেন তারেক রহমান।”
শিক্ষা ব্যবস্থার সংকট নিয়ে অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় শুধু সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বৈষম্যের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা সরকারকে সময় দিচ্ছি, নইলে আদালতের দ্বারস্থ হবো।”
তিনি অভিযোগ করেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সবাই আশাবাদী ছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক মৌলবাদী দলের নেতাকে বসিয়ে যেভাবে বদলির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। শেখ হাসিনা সরকার গত ১৬ বছরে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, এখন সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ পাওয়া যাচ্ছে না।”
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক কুতুবউদ্দিন বাহার, শিক্ষক নেতা হাবিব উল্লাহ, শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক আবদুল হক, নুরুল আলম রাজু, নাজিম উদ্দীন, জসিম উদ্দিনসহ বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলন শেষে বিএনপি ও শিক্ষক নেতারা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।