spot_img

― Advertisement ―

spot_img

পদ্মানদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ জেলের মরদেহ উদ্ধার

মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মানদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জেলে আমিনুল ইসলাম (৫০)-এর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও...
প্রচ্ছদবিশেষ প্রতিবেদনআমরা মানুষের সেবায় আগ্রহী হয়ে ভালো কাজ করতে চাই: তৃতীয় লিঙ্গের প্রিয়া 

আমরা মানুষের সেবায় আগ্রহী হয়ে ভালো কাজ করতে চাই: তৃতীয় লিঙ্গের প্রিয়া 

মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজে অনেকেই একরকম ভয়ে কিংবা দূরত্বে রাখেন। তাদের মধ্যে কিছু মানুষের অপরাধ প্রবণতার কারণে প্রায়ই এ জনগোষ্ঠীর পুরো অংশকেই এক কাতারে ফেলা হয়, যা একেবারেই অন্যায়। সব মানুষই এক নয়। অনেকেই আছেন, যারা সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখছেন, সৎপথে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, তাদের ভালো দিকগুলো মানুষের কাছে সেভাবে উঠে আসে না। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘের’ রাজশাহী শাখার সহ-সভাপতি মিস প্রিয়া।

প্রিয়া বলেন, আমাদের অনেকেই রাস্তাঘাটে মানুষদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করেন। তবে এটা বোঝা উচিত যে, সবার কাছে সবসময় টাকা থাকতে নাও পারে। তাহলে কেন তাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা নিতে হবে? এই ধরনের আচরণ মানুষকে আঘাত দেয়, যা খুবই দুঃখজনক।

তৃতীয় জনগোষ্ঠীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন উল্লেখ করে প্রিয়া বলেন, বঙ্গবাজারে যখন অগ্নিকাণ্ডের মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তখন আমরা ২২ লাখ টাকা সাহায্য দিয়েছি। আবার দেশের বিভিন্ন জেলায় যখন বন্যার তাণ্ডব চলছিল, তখন আমরা শুকনো খাবার ও প্রায় ৬ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পাঠিয়েছি। এসব সহায়তা আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যে থেকেই করা হয়।

তিনি আরও জানান, সমাজে আমরা অনেক ভালো কাজ করে থাকি। অনেকের আর্থিক অসুবিধার কারণে বিয়ে দিতে না পারলে, আমরা পাশে দাঁড়াই। মাদ্রাসা, মন্দির বা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রয়োজনে সহায়তা করি। আমরা মানুষের সেবায় আগ্রহী হয়ে ভালো কাজ করতে চাই। কিন্তু আমাদের এই ইতিবাচক দিকগুলো কেউ দেখে না, বরং শুধু খারাপটাই তুলে ধরা হয়। এটা খুবই কষ্টের।

তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনুরোধ থাকবে যেন কেউ কোন অপরাধে যুক্ত না হন। বরং, সৎপথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিজেদের সংসার চালান। সমাজের অংশ হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে সবার সঙ্গে ভালোভাবে চলার, এবং আমাদের ভালো দিকগুলোকে তুলে ধরার মাধ্যমে মানুষের মনোভাব পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করা উচিত।

তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সচেতন মহল বলছেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা সৎ পথে জীবন পরিচালনা অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণার কারণ হতে পারে। সমাজে তাদের ইতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরতে পারলে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব বদলাতে সহায়ক হবে।

পদ্মা গার্ডেনের একজন ব্যবসায়ী বাবুল আক্তার বলেন, আগে এক সময় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের দ্বারা চাঁদাবাজির শিকার হতে হতো। আমাদের এই এলাকাতেও তারা প্রায়ই চাঁদা আদায় করতেন। তবে এখন পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। তারা ফুল বা চকলেট বিক্রির মাধ্যমে সৎ পথে ব্যবসা করছেন, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তাদের এই উদ্যোগকে আমি আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাই।

আরও পড়ুনঃ দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদী থেকে অবৈধপন্থায় বালু উত্তোলনের দায়ে ১৪শ্রমিককে দন্ড

মতিউর রহমান নামের আরেক পথচারী বলেন, তারা যে এখন ব্যবসা শুরু করেছে নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো দিক। তারা একটা সময় মানুষের কাছে জোর করে টাকা আদায় করতো আর এখন নিজের কর্ম নিজে করে খাচ্ছে এটা অত্যন্ত ভালো একটা ব্যাপার। সকলেই যদি এরকম উদ্যোগী হয়ে ওঠে তাহলে সমাজে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায়। 

পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মোঃ বিদ্যুৎ হোসেন। হিজড়া জনগোষ্ঠীর মিস প্রিয়ার কাছ থেকে একটি ফুলও কিনে নেন। তিনি জানান, একটা সময় ট্রেনে বা বাসে তারা বিভিন্নভাবে টাকা তুলতেন। তাদেরকে টাকা না দিলে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হয়রানি বা অপদস্থ করতেন। কিন্তু তারা সেই কাজ ছেড়ে দিয়ে যদি ব্যবসা বা অন্যান্য কাজের সাথে জড়িত হয় তাহলে অনেকটা ভালো হয়। যিনি সেই কাজগুলো ছেড়ে এসেছেন এবং পাশাপাশি ব্যবসা করছেন তিনি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

মিস প্রিয়া দীর্ঘ তিন বছর ধরে রাজশাহীর পদ্মা গার্ডেন মুক্তমান এলাকায় গোলাপ ফুল চকলেট বিক্রি করেন। পাশাপাশি সেখান থেকে যা আয়োজগার হয় তা দিয়েই তিনি তার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে সুখের সংসার চালান। তিনি রাজশাহীর টিকাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া দিনের আলো হিজড়া সংঘের সহ-সভাপতি।