মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী মহানগরীর সরকারি মহিলা কলেজের উত্তর-পশ্চিম প্রাচীর সংলগ্ন এলাকায় সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা যায় রাজশাহী মহিলা কলেজের সীমানার সাথে তিনটি দোকান ঘর ও স্থানীয় বিএনপির কার্যালয়ের জন্য একটি জায়গা নির্ধারণের সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সরকারি মহিলা কলেজের উত্তর-পশ্চিম সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে রেখেছেন নগরীর কাদিরাগঞ্জ এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী একটা চক্র । গত ৫ আগস্টের পর এরা এতোটাই প্রভাবশালী ও শক্তিশালী হয়ে উঠছে যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে চান না। এতে করে মহিলা কলেজের নিরাপত্তার হুমকির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাহা স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৯২ (৭) ধারার পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ । উক্ত বিষয়ে গত ১৩ নভেম্বর বুধবার অভিযুক্তদের কাগজপত্রাদিসহ উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য বলা হলে অভিযুক্তরা কাগজপত্র নিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে উপস্থিত হয়ে তাদের বক্তব্য পেশ করেছেন। এ সময় মহিলা কলেজের একজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
এলাকাবাসীরা আরোও জানায়, রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন কাদিরগঞ্জ এলাকার হায়দার আলী ছেলে মোঃ সুজন আলী,কাইউমের ছেলে জনি ও সেকেন্দার আলী সহ আনন্দ, রাজু ও রজন জায়গা দখল করে দুই টি দোকান ঘর এবং ১৩ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির অফিস এর জন্য একটি জায়গা নির্ধারণ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সতেচন এলাকাবাসীরা বিএনপির এসকল নেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসীরা আরোও বলেন গত ৫ তারিখের পর হারুন উর রশিদ একটা দোকান জোর করে দখল করে। এমন অভিযোগে কথা অস্বিকার করে হারুন উর রশিদ জানান, এগুলো আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি আমরা ৪৫ বছর যাবত এখানে বসবাস করেছে। সব কাগজপত্র সিটি কর্পোরেশনে দেওয়া হয়েছে আমার কাগজপত্র ঠিক থাকলে অবশ্যই আমার জায়গা আমি পাবো। আর যদি আমাদের কাগজপত্র সব ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে সরকারি জায়গা তারা উচ্ছেদ করে দিবে।
মহিলা কলেজের প্রাচীর এর সাথে প্রথম দোকান ঘরটি অবৈধ দখলের মূল হোতা সুজন ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে জানায়, এটা সরকারী জায়গা সাবেক মেয়র ও তার ভাতিজা অনু ভাই আমাকে এখানে একটা দোকান করে জীবিকা অর্জনের কথা বলেছিলো। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ হারুন ভাইকে দোকান করতে দেখে আমিও এখানে একটা দোকান করেছি। কিন্তু আমার ভূল হয়েছে মহিলা কলেজের সীমানা (দেওয়াল) টি আমি আমার দোকানের দেওয়াল হিসেবে ব্যাবহার করেছি। এ বিষয়ে কে বা কারা মহিলা কলেজ অভিযোগ দেওয়ায় মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) সাদিয়া আফরিন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এই জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ম্যাডাম আসছিল উনি বলছে দোকান তুলে এখানে ফুলের বাগান করা হবে যেনো জায়গার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয় এবং বলেছেন আপনাদের বিএনপির কার্যালয়ের জন্য যে জায়গাটি নির্ধারণ করেছেন সেটা সরকারী নিয়মে লিজ নিয়ে করবেন। এ সময় সুজন, রাজু , আনন্দ, রজন সহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিল।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সেকেন্দারের স্ত্রী বলেন, আমরা বহু বছর থেকে এই জমিতে বসবাস করে আসছি এটা ওয়াকফা সম্পত্তি আমরা নিজেদের নামে নিয়ে আছি আমরা কাগজপত্র সব সিটি কর্পোরেশন ও মহিলা কলেজের কাছে পাঠিয়েছি। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন যেটা ব্যবস্থা নিবে তা মেনে নিবো। আমাদের সকল কাগজ পত্র ঠিক আছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুনঃ শাজাহানপুরে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের অনিয়ম,ব্যবস্থা নিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি
এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্থানীয় বিএনপির নেতা জনি বলেন, আমি বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত। সেকেন্দার চাচার অনুমতি নিয়ে বিএনপি অফিসের জায়গার পাশে একটি দোকান ঘর করেছি।
এ বিষয়ে সরকারি মহিলা কলেজ প্রিন্সিপাল জুবায়েদা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, গত ৫ আগস্টের পরে দখল হয়ে যাওয়া কলেজের জায়গা উচ্ছেদ অভিযানের জন্য আমরা সিটি কর্পোরেশন বরাবর অভিযোগ দিয়েছিলাম। গতকাল শুনানিতে আমাদের একজন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন এ বিষয়ে মাননীয় ম্যাজিস্ট্রেট যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন বলেন, শুনানীতে উভয়পক্ষ উপস্থিত ছিল সরেজমিন তদন্তপূর্বক কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর তাদের বাগান বা বিএনপির অফিসের অনুমতি দেওয়ার আমি কেউ না। যারা এই কথা বলেছেন তাদের আমার সামনে হাজির করলে ভাল হয় আমি তাদের দেখতে চাই। খুব দ্রুত তাদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান।