spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদবিশেষ প্রতিবেদনচর বিজয়: বঙ্গোপসাগরের বুকে উদীয়মান এক পর্যটন সম্ভাবনা

চর বিজয়: বঙ্গোপসাগরের বুকে উদীয়মান এক পর্যটন সম্ভাবনা

মোঃ তরিকুল ইসলাম কলাপাড়া (উপজেলা) প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠে নতুন এক দ্বীপ, যার নাম রাখা হয় চর বিজয়। ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর জেলেদের মাধ্যমে এই চরের সন্ধান পাওয়া যায়। বিজয়ের মাসে আবিষ্কৃত হওয়ায় এর নামকরণ করা হয় “চর বিজয়”। ইতোমধ্যে এটি পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয় এক স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

চর বিজয়ের উদ্ভব ও ইতিহাসঃ- জেলেরা দীর্ঘদিন ধরে মাছ ধরার জন্য যে এলাকাটিতে জাল ফেলতেন, সেখানেই ধীরে ধীরে সাগরের বুক চিরে জেগে ওঠে এই চর। প্রথমবার ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে একটি ১৩ সদস্যের টিম সেখানে পদার্পণ করে। তারা চরটির নামকরণ ও এর গুরুত্ব সবার সামনে তুলে ধরেন। তবে নাম করনের আগে স্থানীয় জেলেরা এটিকে “হাইড়ের চর” বা “ডুবোচর” নামেও চিনতেন।

প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও পরিবেশঃ- শীতের সময় চর বিজয় ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়। তখন এখানে লাল কাঁকড়ার দল ও বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। এবং আট পায়ে ভর করে চলা লাল কাঁকড়াগুলো চরের বালুকে লাল আভা প্রদান করে। এছাড়া গাঙচিল, বালি হাঁসসহ বিভিন্ন পাখি এ দ্বীপকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলে। তবে বর্ষাকালে চরটি পানিতে তলিয়ে থাকে।

পর্যটনের সম্ভাবনাঃ- চর বিজয় ইতোমধ্যে পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। কোলাহলমুক্ত পরিবেশ, চারদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি আর বালির মাঝে লাল কাঁকড়া ও পাখির কলতান পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

পর্যটক নাসিরউদ্দিন বলেন, “চারপাশে সমুদ্র, তার মাঝে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস নিতে অন্য রকম প্রশান্তি লাগে। লাল কাঁকড়া আর পাখির সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর।”

সরকারের উদ্যোগঃ- সরকার ইতোমধ্যে চর বিজয়ের পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ১০০ হেক্টর জমিতে বনায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিলো, যেখানে কেওড়া গাছ সহ আন্নো গাছ রোপণ করা হয়েছিলো। পটুয়াখালীর বন বিভাগ ও প্রশাসন চরটি কচ্ছপ, পাখি এবং লাল কাঁকড়ার অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ও সম্পন্ন করেছেন। কুয়াকাটা “চর বিজয় একটি অপার সম্ভাবনাময় স্থান। এটি রক্ষা করা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি বিশ্বমানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।”

আরও পড়ুনঃ বগুড়ায় শত বছরের পুরোনো মেলায় বিক্রি হলো দেড় হাজার মণ মাছ

চ্যালেঞ্জ ও প্রশাসনের পদক্ষেপঃ- চরটির পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের দ্বীপে নামা সীমিত করার নির্দেশনা দিয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ চর বিজয় পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছে। ভ্রমণপিপাসুরা চাইলে নৌকায় চরের পাশ থেকে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাঃ- সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষার মাধ্যমে চর বিজয় হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। লাল কাঁকড়া, পরিযায়ী পাখি এবং অভয়াশ্রম হিসেবে এটি পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

শীতের মৌসুমে পর্যটকদের মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা প্রদান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষার মাধ্যমে চর বিজয় শিগগিরই কুয়াকাটার গৌরব হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।