মোঃ তরিকুল ইসলাম কলাপাড়া (উপজেলা) প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নে এবার ভুট্টা চাষে অভাবনীয় সাড়া পড়েছে। গত বছরের মরিচ চাষে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণে ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার পর অনেক কৃষক ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। তবে, এখনো কিছু চাষি মরিচ চাষ চালিয়ে যাচ্ছেন, কারণ মরিচের বাজার চাহিদা বেশি এবং এটি লাভজনক ফসল।
ভুট্টা চাষ: সম্ভাবনা ও সাফল্যঃ লতাচাপলির কৃষি জমিতে এবার প্রায় সর্বত্র ভুট্টার চারা দেখা যাচ্ছে। ভুট্টা চাষের অন্যতম সুবিধা হলো এটি তুলনামূলক কম খরচে চাষ করা যায় এবং রোগবালাই কম।
কৃষক ইলিয়াস ফকির জানান, “গত বছর মরিচ চাষে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। পোকা ও রোগের কারণে লাভের বদলে লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই এবছর ভুট্টা চাষ করছি। খরচও কম, ঝামেলাও কম। আশা করছি ভালো লাভ হবে।”
•মরিচ চাষে সংকট: পাতা কোকরানো ও পোকা আক্রমণ, গত বছর মরিচ চাষে যে সমস্যাগুলি দেখা গিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হলো পাতা কোকরানো রোগ এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ। এই সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হওয়ায় ফসলের ফলন ও গুণগত মান উভয়ই কমে গিয়েছিল।
কৃষক আলি এবং মোজাম্মেল বলেন, “মরিচ গাছে পাতা কোকরানো রোগ আর পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন। তবু আমরা এবছর ও খানিকটা জমিতে মরিচ লাগিয়েছি। যদি সঠিক পরিচর্যা করতে পারি, তবে ভালো লাভ হতে পারে আমরা আশাবাদী।”
এদিকে কৃষক মো.আব্বাস হাওলাদার জানান, গত বছর মরিচ চাষ করেন প্রায় ৮ বিঘা জমিতে, কিন্তু মরিচ গাছ পোকার আক্রমণে গুনতে হয়েছে লছ তাই এ বছর মরিচ চাষ না করে ভুট্টা চাষ সুরু করেছেন ভালো মুনাফার আশায়।
মরিচ চাষের ভালো দিক:
(১.)উচ্চ বাজারদর: মরিচ সবসময় বাজারে চাহিদাসম্পন্ন ফসল। ভালো ফলন হলে এটি বড় মুনাফা এনে দেয়। (২.)বহুমুখী ব্যবহার: মরিচ রান্নার অন্যতম প্রধান উপকরণ এবং এটি কাঁচা, শুকনো বা গুঁড়া হিসেবে বিক্রি করা যায়। (৩.)ছোট জমিতে চাষ: সীমিত জমিতে মরিচের ভালো ফলন সম্ভব, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক।
মরিচ চাষের খারাপ দিক:
(১.)রোগবালাই ও পোকামাকড়: পাতা কোকরানো, ব্লাইট রোগ, থ্রিপস, এফিড, এবং হোয়াইটফ্লাইয়ের আক্রমণে ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বেশি। (২.)বেশি পরিচর্যা প্রয়োজন: মরিচ গাছ নিয়মিত যত্ন ও পরিচর্যার অভাবে সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (৩.)আবহাওয়া সংবেদনশীল: অতিরিক্ত বৃষ্টি বা খরার মতো প্রতিকূল আবহাওয়া ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। (৪.)উচ্চ উৎপাদন খরচ: উন্নত বীজ, সার এবং কীটনাশক ব্যবহারে খরচ তুলনামূলক বেশি।
ভুট্টা চাষের ভালো দিক:
(১.)কম খরচে উৎপাদন: ভুট্টা চাষে সার ও কীটনাশকের পরিমাণ কম লাগে এবং উৎপাদন খরচ কম। (২.) রোগবালাই কম: মরিচের তুলনায় ভুট্টার রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম। (৩.)ভালো ফলন: ভুট্টার ফলন দ্রুত হয় এবং এটি অনেক দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়। (৪.)বাজার চাহিদা: ভুট্টা পশুখাদ্য, খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত হওয়ায় এটি একটি লাভজনক ফসল।
জমির সর্বোত্তম ব্যবহার:
এবার লতাচাপলিতে জমির ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন এসেছে। আগে যেখানে ফাঁকা জমি বা গরু চারণভূমি ছিল, সেখানে এখন প্রতিটি ইঞ্চি জমিতে ফসল চাষ করা হচ্ছে। মুখ ডাল, মরিচ কিংবা ভুট্টার মতো ফসল দিয়ে পুরো জমি আচ্ছাদিত করা হচ্ছে এতে কৃষকরা আর্থিক দিক থেকে লাভবান হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ চলতি মৌসুমে সার সংকটে লক্ষ্মীপুর, দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে কৃষক
কৃষক ওবাইদুল বলেন, “গরু চরানোর জন্য ফাঁকা জমি এখন আর নেই। প্রতিটি জমিতে কিছু না কিছু লাগানো হচ্ছে, কারণ ফসল ছাড়া জমি ফেলে রাখা এখন আর সম্ভব নয়।”
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, “মরিচ চাষে যারা সমস্যায় পড়েছেন, তাদের জন্য উন্নত জাতের বীজ ও কীটনাশকের ব্যবহার বাড়াতে হবে। ভুট্টা চাষে যারা ঝুঁকছেন, তাদের জন্যও সঠিক পদ্ধতিতে পরিচর্যা জরুরি।”
লতাচাপলিতে কৃষকরা ভুট্টা চাষের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার সন্ধান করছেন। তবে মরিচ চাষের বাজারদর ও চাহিদা থাকার কারণে কিছু কৃষক পূর্বের ধারাবাহিকতায় এই ফসল চাষ করছেন লাভের আসায়। ভুট্টা এবং মরিচ-উভয় ফসলেই সঠিক পদ্ধতি এবং আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে কৃষকরা অধিক ফসল ফলাতে উৎসাহিত হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৃদ্ধি পাবে ভুট্টার চাষ বাড়লে এটি খাদ্যশস্য, পশুখাদ্য এবং শিল্পজাত পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ বাড়াবে এবং রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করবে।