মোহাম্মদ ইসমাইল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী এবং তার ছেলে ফরাজ করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকা অনুদান এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। এ আন্দোলনের সময় বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রধারীদের হামলা, গুলিবর্ষণ এবং সহিংসতায় একাধিক শিক্ষার্থী নিহত ও শতাধিক আহত হন।
সূত্রমতে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে বৈধ এবং অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে ছাত্র আন্দোলন দমাতে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৬ ও ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট এবং নিউ মার্কেট এলাকায় ছাত্র-জনতার উপর হামলায় ব্যবহৃত বেশিরভাগ অস্ত্র সরবরাহের সমন্বয় করেন রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের নন্দনকানন, রাউজান, এবং পার্শ্ববর্তী ফেনী জেলা থেকে অস্ত্র এনে ছাত্রদের উপর হামলা চালানো হয়। স্টেশন রোডের মোটেল সৈকত এবং খুলশীর পুলিশের গেস্ট হাউসে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মজুদ করা হয়েছিল।
সিএমপির (চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ) সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন থানায় হামলা ও লুটপাটের সময় ৫০০ আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১২ হাজার গোলাবারুদ লুট করা হয়। যৌথবাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৫টি অস্ত্র এবং ২৭৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
সিএমপির হিসাব অনুযায়ী, লাইসেন্সধারী ১২৪টি অস্ত্র এখনো থানায় জমা পড়েনি। এ ছাড়া লুট হওয়া অস্ত্রের বড় একটি অংশ ভারতে, বার্মা এবং নেপালে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৬ জুলাই মুরাদপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ ওয়াসিম আকরামসহ পাঁচজন নিহত হন। পরে ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে গুলিতে তানভীর ছিদ্দিকী নিহত হন। এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাতজন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হন।
আরও পড়ুনঃ আগামী বর্ষায় নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি: শাহজাহান চৌধুরী
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, "অস্ত্রধারী যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের গ্রেফতার এবং তাদের কাছ থেকে বৈধ-অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, অস্ত্রধারী যুবলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি এবং হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ভারতে অবস্থান করছেন, আর আরশেদুল আলম বাচ্চু যুক্তরাজ্যে পালিয়ে গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় হয়ে এই অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করতে না পারে, তবে জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে।
চট্টগ্রামের আন্দোলনে আহত এবং নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।