spot_img

― Advertisement ―

spot_img

নদীভাঙনের আতঙ্কে রাজশাহীর আষাড়িয়াদহ ও আলাতুলির ৬০ হাজার মানুষ

মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী চর আষাড়িয়াদহ ও আলাতুলি ইউনিয়ন এখন নদীভাঙনের ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি। প্রতিদিন পদ্মার...
প্রচ্ছদবিশেষ প্রতিবেদননদীভাঙনের আতঙ্কে রাজশাহীর আষাড়িয়াদহ ও আলাতুলির ৬০ হাজার মানুষ

নদীভাঙনের আতঙ্কে রাজশাহীর আষাড়িয়াদহ ও আলাতুলির ৬০ হাজার মানুষ

মোঃ আব্দুল আলিম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী চর আষাড়িয়াদহ ও আলাতুলি ইউনিয়ন এখন নদীভাঙনের ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি। প্রতিদিন পদ্মার গর্জনে মুছে যাচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও জীবন সংগ্রামের সবকিছু। প্রায় ৬০ হাজার মানুষ চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন। কেউ সব হারিয়েছেন, কেউবা হারানোর অপেক্ষায়।

চর আষাড়িয়াদহের কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, “এক সময় ছয় বিঘা জমি ছিল, তিন বিঘা ইতোমধ্যে পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ঘর নদীতে চলে গেছে চোখের সামনে, কিছুই করতে পারিনি। বাকি তিন বিঘা নিয়েও আশা নেই।”

নদীভাঙনের শিকার শিক্ষার্থী আয়েশা খাতুন জানায়, “গত বছর ঘর নদীতে চলে যাওয়ার পর মামার বাড়িতে থাকি। স্কুলে যাওয়া বন্ধ, পড়ালেখা থেমে গেছে। বন্দী জীবনের মতো লাগছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বাংলাদেশের কেউ না।”

স্থানীয় বৃদ্ধ সেতাবুর বলেন, “তিনবার বসতভিটা পাল্টেছি। সরকারিভাবে অনেক প্রতিশ্রুতি শুনেছি, কিন্তু কিছুই হয়নি। বাড়ি ভেঙে গেলে জীবনটাই ভেঙে যায়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা ইমাম হাসান বলেন, “নদীভাঙন আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জনপদের কান্না যদি আমরা শুনেও নিরুত্তর থাকি, তা হলে সেটা জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা। স্থায়ী সমাধান ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তি নেই।”

আলাতুলি ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল্লাহীল কাফি বলেন, “এই এলাকার মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। খাওয়া নেই, ঘর নেই, জমি নেই। সরকার এখনই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে পদক্ষেপ না নিলে পুরো এলাকা ধ্বংস হয়ে যাবে।”

আলাতুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, “আমাদের ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডই এখন পদ্মার ভাঙনের মুখে। কেবল সময়ের অপেক্ষা, কখন মাটির নিচে মিলিয়ে যাবে।”

আরও পড়ুনঃ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন কার্টুনে মানব ভ্রূণ, তদন্তে পুলিশ

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম (ভোলা) বলেন, “১, ২, ৪ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভাঙনের তাণ্ডবে মানুষ সর্বস্ব হারাচ্ছে। এই ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু সরকারিভাবে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।”

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, “চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের নদীভাঙন আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পে এই এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের প্রত্যাশা, দ্রুত প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করে নদীভাঙনের করাল গ্রাস থেকে তাদের বাঁচানো হোক। কারণ তাদের ভাষায়—“এই ভূমি আমাদের জন্মভিটা, আমাদের বাঁচিয়ে দিন।”