
মোঃ আসিফুজ্জামান আসিফ, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে পরিচিত নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক এখন পরিণত হয়েছে এক বিস্তীর্ণ ময়লার ভাগাড়ে। শ্রীপুর থেকে শুরু করে আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, তেঁতুলঝোড়া, উলাইল, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কের আশেপাশে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে নতুন নতুন ময়লার স্তুপ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ভাগাড় গড়ে উঠেছে শ্রীপুর মহাসড়কের পশ্চিম পাশে, যেখানে প্রতিদিন শতাধিক ময়লার গাড়ি ময়লা ফেলে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাগাড়ে ঢোকার মুখে খাতা-কলম নিয়ে হিসাব রাখছেন এক ব্যক্তি। নাম মো. রায়হান ইসলাম। তিনি জানান, গত ১৬-১৭ বছর ধরে এখানকার ময়লার ভাগাড়ের ‘ইনচার্জ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার ভাষ্যমতে, “প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে ১০০টি ছোট-বড় ময়লার গাড়ি এখানে আসে। প্রতিটি গাড়ির মাসিক ভাড়া ৫-৬ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মত আয় হয়।”
প্রশ্ন করা হলে তিনি অকপটে জানান, “এটা আমাদের ব্যবসা। অনুমতি লাগে না। সব কিছু ম্যানেজ করেই করছি।”
এমন বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, সরকারি জমিতে অবৈধভাবে ময়লার ভাগাড় বানিয়ে চলছে নিয়মিত বাণিজ্য, যেখানে কোনো পরিবেশগত বা জনস্বাস্থ্য বিবেচনা নেই। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতা জনমনে প্রশ্ন তুলেছে— কার ছত্রছায়ায় চলছে এমন অপরিকল্পিত ময়লা ব্যবসা?
শুধু শ্রীপুর নয়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার নিউ মার্কেটসংলগ্ন ঢাকামুখী সার্ভিস লেনটিও পরিণত হয়েছে উন্মুক্ত ডাস্টবিনে। দুর্গন্ধে পথচারীরা নাক চেপে চললেও রেহাই মিলছে না। অথচ এই পথ দিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করেন সাভার উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। কিন্তু তাদের নজরে পড়ছে না মহাসড়কের এমন ভয়াবহ চিত্র।
আরও পড়ুনঃ ইবিতে ‘আওয়ামী ন্যারেটিভ ধ্বংসের দিন’ স্মরণে মিছিল, স্লোগান মুখর ক্যাম্পাস
এ সমস্যা নতুন নয়। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযানের পর কিছুদিনের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও, আবারও সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরে আসে। সাভারবাসীর প্রশ্ন, এই পুনরাবৃত্তির পেছনে কে বা কারা কাজ করছে? এর পেছনে কি কোনো অদৃশ্য প্রভাবশালী চক্রের হাত রয়েছে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুবকর সরকার জানান, “বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। একটি নির্দিষ্ট ময়লার ভাগাড়ের জন্য উপযুক্ত জায়গা খোঁজা হচ্ছে। স্থান নির্ধারণ করা গেলে এই সমস্যা সমাধান হবে।”
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— প্রশাসনের এত বছরের ‘চেষ্টা’র ফল কবে দৃশ্যমান হবে? উন্নয়নের মহাসড়ক যদি নিজেই আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়, তাহলে উন্নয়ন কার জন্য? আর কতকাল জনগণকে ভুগতে হবে ‘ম্যানেজমেন্ট নির্ভর’ এই গন্ধময় দুর্ভোগে?