নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের নেপথ্যের কাহিনি নতুন করে আলোচনায় এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুকে একটি পোস্টে বিশিষ্ট বিশ্লেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য এই বিপ্লবের পরিকল্পনাকারীদের একজন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী ও গবেষক আসিফ হায়দারের নাম উল্লেখ করে বলেন, “এই বিপ্লব আমাদের কালেক্টিভ এফোর্ট, কিন্তু আসিফ হায়দার ছিলেন এর মগজ।”
পিনাকীর ভাষায়, বিপ্লব শুরু হওয়ার অন্তত দুই মাস আগেই — ২০২৪ সালের ২১ মে — আসিফ হায়দার একটি বিশ্লেষণধর্মী পরিকল্পনা ফাইল প্রণয়ন করেন যার শিরোনাম ছিল "Tactics and Logistics of Mass Revolution in Bangladesh"। পরিকল্পনাটি ডিজিটাল ফরম্যাটে তৈরি করে তিনি পিনাকীকে পাঠান হোয়াটসঅ্যাপে। এই পরিকল্পনায় কীভাবে মাঠে বিপ্লব সংগঠিত হবে, শক্তি সমাবেশ হবে, এবং সরকারপতনের দিকনির্দেশনা কী হবে — তা অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল বলে জানান পিনাকী।
পিনাকীর পোস্টে উঠে এসেছে আসিফ হায়দারের শিক্ষা ও পেশাগত পটভূমি। তিনি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ ও বুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে একজন প্রকৌশলী এবং গবেষক হিসেবে কর্মরত। পিনাকী উল্লেখ করেন, আসিফ তার সঙ্গে একাধিক ভিডিও প্রজেক্টে কাজও করেছেন।
পিনাকী বলেন, “২০২৪ সালের শুরুতে আমাদের আন্দোলনে তেমন কোনো রূপরেখা ছিল না। হতাশা চারদিকে। ভারতীয় পণ্য বয়কট আন্দোলন শুরু করেছিলাম মনোবল ধরে রাখতে। তখন হঠাৎ একদিন আসিফ হায়দার পরিকল্পনার সেই বিস্ময়কর ফাইলটি পাঠান। পড়ে আমি নিজেও অভিভূত হয়েছিলাম। সেই পরিকল্পনার প্রতিটি ছাপ আমরা দেখেছি মাঠের লড়াইয়ে।”
আরও পড়ুনঃ রাজশাহী কলেজ প্রেজেন্টেশন ক্লাবের দ্বিতীয় প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন
তিনি আরও দাবি করেন, সেই পরিকল্পনায় এমনকি লেখা ছিল কীভাবে ইসরায়েলি সহায়তা পাওয়া সরকারি গোয়েন্দা বিভাগের নজরদারি এড়িয়ে কৌশল সাজাতে হবে। যদিও সেটি "ক্লাসিফায়েড" থাকায়, সেই অংশটি তিনি প্রকাশ করেননি।
পিনাকী লেখেন, “আসিফের ফাইল ড্রাফট করে দেওয়ার দেড় মাসের মাথায় বিপ্লব শুরু হয়ে যায়, এবং দুই মাসের মধ্যে হাসিনার পতন ঘটে। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত স্বীকার করেছেন গোয়েন্দা ব্যর্থতা।”
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আসিফেরা অন্তরালেই থাকে। ইতিহাসের পাতায় তারা নেই, কিন্তু বিপ্লবের প্রতিটি বাঁকে তাদের প্রজ্ঞা ছাপ রেখে গেছে। আজ কেউ তাকে চিনবে না, সেটাও তো ইতিহাসের এক নির্মম বাস্তবতা।”
এই লেখার মাধ্যমে পিনাকী ভট্টাচার্য শুধু একটি বিপ্লবের নেপথ্য পরিকল্পনার বিস্ময়কর পূর্বাভাসকেই সামনে আনেননি, বরং উঠে এসেছে— ইতিহাসের পেছনে থাকা নীরব, বুদ্ধিদীপ্ত মানুষদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও।