১৯ নভেম্বর ২০২১। টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেনি নিয়ে রীতিমতো সঙ্কট। টিম পেইন পদত্যাগ করলেন, আর ঠিক তিন সপ্তাহ পর অ্যাসেজের মতো মর্যাদাপূর্ণ সিরিজ। স্টিভ স্মিথের নাম সামনে এলেও, ‘স্যান্ডপেপারগেট’ কেলেঙ্কারির পর থেকে তার প্রতি জনমত নেতিবাচক। ঠিক এমনই সময়ে, সমস্ত স্রোতের বিপরীতে গিয়ে একজন ফাস্ট বোলারকে ক্যাপ্টেন করার সাহস দেখালো অস্ট্রেলিয়ান সিলেকশন কমিটি—প্যাট কামিন্স!
১৯৫৬ সালে রে লিন্ডওয়াল অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলকে মাত্র এক ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এরপর ৬৫ বছর পর আবারও ফাস্ট বোলারের হাতে টেস্ট নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হল। মজার বিষয়, প্যাট কামিন্সের নামমাত্র নেতৃত্ব অভিজ্ঞতা ছিল। ডোমেস্টিক ক্রিকেটে মাত্র চারটি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটেও কোনও ক্যাপ্টেন্সির অভিজ্ঞতা ছিল না। তবু নির্বাচকরা তাকে সেরা অপশন হিসেবে বেছে নিলেন।
মাত্র তিন সপ্তাহ সময় পেয়ে নেতৃত্বে নামলেন কামিন্স। সেই অ্যাসেজে অস্ট্রেলিয়া ৫ ম্যাচের সিরিজ ৪-০ ব্যবধানে জিতল। কামিন্স নিজে সর্বোচ্চ ২১ উইকেট নিয়ে বোলিং পারফরম্যান্সে ছিলেন সবার উপরে। টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে তার প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সফল।
২০২২ সালে অ্যারন ফিঞ্চ ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন। সামনে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সিলেকশন কমিটি একাধিক বিকল্প বিবেচনা করলেও শেষমেশ কামিন্সের হাতেই তুলে দিল ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব। প্রথম দুই ম্যাচে হারলেও কামিন্স সমালোচনাকে জবাব দিলেন বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে। ভারতকে আহমেদাবাদে হারিয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা ঘরে তুললেন।
আরও পড়ুনঃ দুধ দিয়ে গোসল করে যুবকের ঘোষণা: জীবনে আর কোনো দিন প্রেম করব না
ক্যাপ্টেন কামিন্সের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া অর্জন করল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি, অ্যাসেজ, এবং দুই ঐতিহ্যবাহী বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি। আইপিএলে তার দল ফাইনালে পৌঁছায়, এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জোড়া হ্যাট্রিক করে নজর কাড়েন। তিন বছরে তার ঝুলিতে জমা পড়েছে দু'টি আইসিসি শিরোপা এবং একাধিক ঐতিহ্যবাহী ট্রফি।
মাত্র চারটি ডোমেস্টিক ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে অধিনায়কত্ব শুরু করা কামিন্স আজ বিশ্বের সেরা ক্যাপ্টেনদের একজন। মাঠে তিনি শুধু পারফর্মার নন, একজন প্রকৃত নেতা। তার নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে, সাহসী সিদ্ধান্তই রূপকথার জন্ম দেয়। প্যাট কামিন্স, এক সত্যিকারের রূপকথার নাম।