spot_img

― Advertisement ―

spot_img

মাদকবিরোধী সংবাদ প্রচারের জেরে সাংবাদিকের ওপর হামলা: চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রধান দুই আসামি গ্রেফতার

মাহিদুল ইসলাম ফরহাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদকবিরোধী সংবাদ প্রচারের জেরে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত প্রধান দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী...
প্রচ্ছদখেলাধুলাফুটবলবার্সেলোনা ও তাদের একাডেমি লা মাসিয়া

বার্সেলোনা ও তাদের একাডেমি লা মাসিয়া

শাহেদ হোসেন শামিম, স্পোর্টস ডেস্কঃ ফুটবল এক আবেগের নাম। জাতীয় দলের পাশাপাশি ক্লাব ফুটবলেও সারা বছর উন্মাদনায় মেতে থাকেন ফুটবলপ্রেমীরা। তেমনি এক ইউরোপিয়ান জায়ান্ট ক্লাব হলো এফসি বার্সেলোনা। তাদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস, যার অন্যতম স্তম্ভ তাদের যুব একাডেমি ‘লা মাসিয়া’। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল একাডেমি হিসেবে লা মাসিয়া বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বার্সেলোনার আর্থিক সংকটের সময়ও এই একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়রা ক্লাবের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। লিওনেল মেসি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি হার্নান্দেজ, কার্লোস পুয়োল, পেপ গার্দিওলা সহ অসংখ্য তারকা এই একাডেমিরই ফলাফল।

প্রতিষ্ঠা ও অবস্থান

লা মাসিয়া, সম্পূর্ণ নাম ‘লা মাসিয়া দে ক্যান প্লানেস’, ১৯৭৯ সালের ২০ অক্টোবর যুব একাডেমি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এটি স্পেনের বার্সেলোনা শহরের লেস কোর্তস জেলায়, ক্যাম্প ন্যু স্টেডিয়ামের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত। মূলত এটি একটি প্রাচীন পল্লী নিবাস, যা ১৭০২ সালে নির্মিত হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে ক্যাম্প ন্যু উদ্বোধনের পর এটি ক্লাবের সামাজিক সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়, পরবর্তীতে যুব খেলোয়াড়দের আবাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়।

সুযোগ-সুবিধা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা

লা মাসিয়ায় প্রায় ৩০০ যুব খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। একাডেমির বার্ষিক খরচ প্রায় ৫ মিলিয়ন ইউরো, যা ইউরোপের অন্যতম ব্যয়বহুল একাডেমিগুলোর মধ্যে একটি। এখানে ছয় বছর বয়স থেকে খেলোয়াড়দের ভর্তি করা হয়। প্রতি বছর প্রায় ১,০০০ আবেদনকারীর মধ্যে সেরা ২০০ জনকে নির্বাচন করা হয়, যাদের মধ্যে ৬০ জনকে আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ পদ্ধতি মূলত ৪-৩-৩ ফরমেশনের উপর ভিত্তি করে, যা ক্লাবের মূল দলের খেলায় প্রতিফলিত হয়। একাডেমির ট্রেইনাররা অধিকাংশই বার্সেলোনার সাবেক ফুটবলার, যা প্রশিক্ষণের মানকে আরও উন্নত করে।

কোচিং স্টাফ ও পরিচালনা

একাডেমির কোচিং স্টাফের মধ্যে অনেকেই বার্সেলোনার সাবেক খেলোয়াড় ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক। উল্লেখযোগ্যভাবে, ইয়োহান ক্রুইফের নাম আসে, যিনি বার্সেলোনার প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ‘টিকিটাকা’ কৌশল প্রবর্তন করে ক্লাবের সাফল্যে অবদান রেখেছেন। এছাড়া, পেপ গার্দিওলা, যিনি লা মাসিয়া থেকে উঠে এসে পরবর্তীতে বার্সেলোনার প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ক্লাবকে অসংখ্য শিরোপা এনে দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ বেলকুচিতে একই পরিবারের চারজনকে কুপিয়ে আহত, থানায় মামলা

উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও অর্জন

লা মাসিয়ার সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো এখান থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি। ২০১০ ফিফা ব্যালন ডি’অরের শীর্ষ তিনজনই ছিলেন লা মাসিয়ার গ্র্যাজুয়েট—লিওনেল মেসি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও জাভি হার্নান্দেজ। একই বছর স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী দলে লা মাসিয়ার ছয়জন খেলোয়াড় ছিলেন, যা একাডেমির সাফল্যের প্রতিফলন।

বার্সেলোনার সাফল্যে লা মাসিয়ার অবদান

বার্সেলোনার সাফল্যের পেছনে লা মাসিয়ার অবদান অসামান্য। ক্লাবের আর্থিক সংকটের সময়ও একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়রা মূল দলে জায়গা করে নিয়ে ক্লাবের সাফল্যে ভূমিকা রেখেছেন। ২০১২ সালের নভেম্বরে লেভান্তের বিপক্ষে ম্যাচে বার্সেলোনার শুরুর একাদশের সব খেলোয়াড়ই লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা, যা একাডেমির সাফল্যের প্রতীক।

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম

বর্তমানে লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের মধ্যে লামিন ইয়ামাল, গাভি, দানি ওলমো, আলেহান্দ্রো বালদে প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। তারা বার্সেলোনার মূল দলে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন এবং ভবিষ্যতে ক্লাবের সাফল্যে অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

লা মাসিয়ার সন্তানরা শুধুমাত্র ক্লাবের জার্সি গায়ে দেন না, তারা ক্লাবের প্রতিটি রঙ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য হৃদয়ে ধারণ করেন। তাদের ভালোবাসা নিছক সমর্থনের সীমা ছাড়িয়ে আত্মার গভীর থেকে উৎসারিত এক নিবেদন। লা মাসিয়ার এই অবদান বার্সেলোনাকে বিশ্ব ফুটবলে একটি বিশেষ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে।