
মোঃ খালিদ হোসেন, স্পোর্টস ডেস্কঃ অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে বাংলাদেশ ফুটবল দলে যোগ দিয়েছেন ইংলিশ ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। তার আগমনের পর থেকেই বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে নতুন আশা জেগেছিল। তবে সেই প্রত্যাশার পুরোটা পূরণ হয়নি ভারতের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে। গোলশূন্য ড্র হওয়া ম্যাচে একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করে হতাশ করেছে বাংলাদেশ। আর এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার কিছু ভুল সিদ্ধান্ত।
ভারত ম্যাচের জন্য স্কোয়াড ঘোষণার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ইতালির চতুর্থ বিভাগের ক্লাব ওলবিয়া কালচিওর ফুটবলার ফাহমিদুল ইসলাম প্রাথমিক দলে ডাক পেলেও মূল স্কোয়াডে জায়গা পাননি। অথচ প্রস্তুতি ম্যাচে সৌদি আরবের তায়েফের একটি স্থানীয় ক্লাবের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। তার বাদ পড়ার কারণ জানতে চাইলে ক্যাবরেরা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। একইভাবে বাদ পড়েন তাজ উদ্দিন ও পিয়াস আহমেদ নোভার মতো প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলাররা।
ম্যাচের আগে মিডফিল্ডার কাজেম শাহকে ইনজুরির কারণে বাদ দেওয়া হয়, যা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় বিস্ময় ছিল জামাল ভূঁইয়াকে বেঞ্চে রাখা। বাংলাদেশ যখন একের পর এক গোল মিসের মহড়া দিচ্ছিল, তখন বেঞ্চে বসে আফসোস করতে হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা আল আমিনকে। পুরো ম্যাচে এক মিনিটের জন্যও তাকে মাঠে নামানো হয়নি। পরে কোচ ক্যাবরেরা জানান, “বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ আর এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ার এক নয়। স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া তার জন্য যথেষ্ট।” অথচ ফয়সাল ফাহিম, চন্দন রায় ও জনিরা ঠিকই খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন যারা ঘরোয়া লীগে গেইম টাইম পায় না।
ক্যাবরেরার আরেকটি বড় ভুল ছিল রক্ষণাত্মক কৌশল। তিনি হৃদয়কে আক্রমণাত্মক পজিশনে রেখে হামজা চৌধুরীকে পুরোপুরি ডিফেন্সিভ রোলে খেলান, যার ফলে ভারতীয় দল আক্রমণে সুবিধা পায়। ম্যাচে বিজয়ের জন্য ক্যাবরেরার তেমন কোনো চেষ্টা ছিল না বলেই মনে হয়েছে। এছাড়া বেঞ্চের খেলোয়াড়দের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে গানার্সদের মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদ
তপু বর্মন ইনজুরিতে পড়লে তার জায়গায় স্বাভাবিকভাবে একজন সেন্টারব্যাক নামানো দরকার ছিল। কিন্তু ক্যাবরেরা সেখানে ফুলব্যাক রহমত মিয়াকে খেলান, যা দলের রক্ষণভাগকে আরও দুর্বল করে তোলে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ক্যাবরেরা দলের ভেতরে ভালো বোঝাপড়া গড়ে তুলতে পারেননি। খেলোয়াড়দের মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয়ের অভাব ছিল, যা মাঠের খেলায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার কৌশল ও পরিকল্পনার অভাব বাংলাদেশ ফুটবলের উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের ফুটবল সামনে আরও পিছিয়ে পড়বে। তাই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) উচিত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্যাবরেরার জায়গায় নতুন ও দক্ষ একজন কোচ নিয়ে আসা, যিনি দলকে সঠিক পরিকল্পনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।