স্পোর্টস ডেস্কঃ বাংলাদেশ ফুটবলে প্রবাসী প্রতিভা অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ ক্রমশ গতি পাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নতুন এক নামকে রাডারে রেখেছে—বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান ফুটবলার সামিত সোম। হামজা চৌধুরীর পর এবার তিনি কি লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চড়াবেন?
কানাডার আলবার্টায় জন্ম নেওয়া সামিত সোম বর্তমানে কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ক্যাভালরি এফসি-তে খেলছেন। ২৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের ফুটবল যাত্রা শুরু হয় এডমন্টনের স্থানীয় ক্লাব থেকে, এরপর ধাপে ধাপে তিনি এগিয়ে যান কানাডার সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল ও একাডেমিক ফুটবলে। সেখানে তিনি ‘রুকি অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কারও জয় করেন।
এরপর এফসি এডমন্টন, মন্ট্রিল ইমপ্যাক্ট, এবং নিউ ইংল্যান্ড রেভুলেশন-এর মতো ক্লাবে খেলেছেন। ২০১৯ সালে মেজর লিগ সকারে (MLS) মন্ট্রিল ইমপ্যাক্টের হয়ে নিজের প্রথম গোল করেন। যদিও ইনজুরির কারণে তার ক্যারিয়ারে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে, তবে তিনি এখন পূর্ণ উদ্যোমে খেলছেন ক্যাভালরি এফসির হয়ে।
২০১৪ সালে কানাডার অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অভিষেক ঘটে সামিত সোমের। এরপর অনূর্ধ্ব-২০ এবং অনূর্ধ্ব-২৩ দলেও খেলেছেন। ২০২০ সালে কনকাকাফ অলিম্পিক বাছাইপর্বে তিনি ছিলেন কানাডার স্কোয়াডে, এমনকি জাতীয় দলে ডাকও পেয়েছিলেন। তবে কানাডার হয়ে প্রতিযোগিতামূলক কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়ায় এখনো তিনি বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়ানোর যোগ্যতা রাখেন।
সামিত সোমের বাবা মানোস সোমের পৈতৃক বাড়ি সিলেটে, আর মা নন্দিতা সোমের শিকড় ঢাকায়। বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো জটিলতা নেই। ২০২২ সালে তিনি শ্রীমঙ্গলে নিজের পৈতৃক বাড়িতে এসেছিলেন এবং তখনই বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এরই মধ্যে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাফুফের সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম বলেন,
"আমরা সামিত সোমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি কোচ ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে দুই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।"
আরও পড়ুনঃ ক্যাবরেরার ভুলে মাঠের খালায় হতাশ বাংলাদেশ ফুটবল
এপ্রিলের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। জুনে এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই হয়তো সামিত সোম লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়াতে পারেন।
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হলেও তিনি ডিফেন্সিভ ও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার—দুই ভূমিকাতেই সমান পারদর্শী। তার বর্তমান ক্লাব ক্যাভালরি এফসি-তে তিনি ডাবল পিভট রোলে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেন। চমৎকার পাসিং দক্ষতা – লম্বা পাস, ওয়ান-টু পাস, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স চেরা পাস দেওয়ায় পারদর্শী। প্রেস রেজিস্ট্যান্স – প্রতিপক্ষের চাপের মধ্যেও বল ধরে রাখার সামর্থ্য আছে। কৌশলী প্লেমেকিং – রিদম বোঝার ক্ষেত্রে ম্যাচিউরড, সময় অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা – মিডফিল্ড থেকে আক্রমণ পরিচালনা করতে পারেন।
তবে তার কিছু দুর্বলতাও রয়েছে: গতি তুলনামূলক কম – দ্রুতগতির প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারেন। ফার্স্ট টাচ কিছুটা দুর্বল – চাপের মুখে বল নিয়ন্ত্রণ করতে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়েন।
যদি সামিত সোম বাংলাদেশ দলে যোগ দেন, তবে তিনি হামজা চৌধুরীর সঙ্গে শক্তিশালী মিডফিল্ড জুটি গড়ে তুলতে পারেন। বাংলাদেশের মিডফিল্ডে এতদিন একজন সৃজনশীল ও বল কন্ট্রোলার মিডফিল্ডারের অভাব ছিল, যা তিনি পূরণ করতে পারেন।
দেশের ফুটবলে নতুন দিগন্ত খুলতে পারেন সামিত সোম। এখন শুধু অপেক্ষা তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের।
এডি/ মুহাম্মদ কাইউম