বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্বে তিন বছরের বেশি সময় কাটালেন স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। এই সময়জুড়ে তার দল গঠন, খেলোয়াড় পরিবর্তন ও কৌশল নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। হংকংয়ের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে হারেও সেই সমালোচনার আগুন আরও দাউ দাউ করে জ্বলছে। বিশেষ করে একাদশ নির্বাচন ও দেরিতে বদলি পাঠানো নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।
এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাইয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা আমেরিকান প্রবাসী জায়ান আহমেদকে কোচ মাঠে নামান ৭৫ মিনিটে। তিনি নামার পর থেকেই বদলে যায় খেলার গতি ও ছন্দ। বাঁ প্রান্তে গতির সঞ্চার এনে গোলের সুযোগ তৈরি করেন বারবার। একইভাবে সামিত সোম, ফাহমিদুল ও জামাল ভূঁইয়া মাঠে নামার পর বাংলাদেশ ফিরে পায় নিয়ন্ত্রণ ও দৃঢ়তা। বিশেষ করে জামাল নেমে মিডফিল্ড শক্তিশালী করলে ম্যাচে ফেরার পথ তৈরি হয়। অথচ তাদের সবাইকে প্রথমার্ধে বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন কোচ ক্যাবরেরা।
ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কোচকে প্রশ্ন করা হয়— তার কৌশল ও একাদশ নির্বাচনের ভুলেই কি এই হারের পরিণতি? জবাবে তিনি উল্টো বলেন, “কোনো সন্দেহ ছাড়াই প্রথমার্ধ বাংলাদেশের জন্য সেরা ছিল। আমি যতদিন বাংলাদেশে আছি, এর মধ্যে এই ম্যাচের প্রথমার্ধই সবচেয়ে ভালো ছিল। ফলে লাইনআপ ঠিক ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম ২০-৩০ মিনিট তারা (হংকং) আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে। তবে জামাল নামার পর আমরা উন্নতি করেছি। যারা বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছে, তাদের পারফরম্যান্সেও আমি সন্তুষ্ট।”
তবে জায়ান আহমেদকে একাদশে না রাখার কারণ হিসেবে ক্যাবরেরা যুক্তি দেখিয়েছেন, “সাদ ডুয়েলে ভালো খেলোয়াড়। এভারটন (হংকংয়ের খেলোয়াড়) যখন ক্লান্ত হচ্ছিল, তখন জায়ানকে নামানো হয়েছে। সে ভালোই খেলেছে।” একইভাবে সামিত সোমকে দ্বিতীয়ার্ধে নামানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সে দুই মাস খেলার বাইরে ছিল। বাংলাদেশে মাত্র পরশু রাতে এসেছে। তার সঙ্গে আলোচনা করেই দ্বিতীয়ার্ধের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।”
এশিয়া কাপ বাছাইয়ে তিন ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের পয়েন্ট মাত্র ১। চার দলের গ্রুপে লাল-সবুজদের অবস্থান সবার নিচে। হংকং তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে, সিঙ্গাপুর ৫ ও ভারতের ২। বাস্তবিক অর্থে এই গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এশিয়া কাপে উঠবে— এমন আশা এখন প্রায় অসম্ভব। হামজা-সামিতদের আগমনে ৪৫ বছর পর যে নতুন স্বপ্ন জেগেছিল, তা হংকং ম্যাচের পর প্রায় নিভে গেছে।
আরও পড়ুনঃ শেষ মুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গ, হংকংয়ের কাছে ৪-৩ গোলে পরাজিত বাংলাদেশ
এই ব্যর্থতার দায় কার— এমন প্রশ্নে কোচ ক্যাবরেরা দায় নিলেন নিজের কাঁধে। বলেন, “আমি দায় নিচ্ছি, তবে এটি শুধু আমার নয়, পুরো দলেরও দায়। মূলত দায়টা আমার।”
তবুও আশার আলো দেখিয়েছেন স্প্যানিশ কোচ। তিনি জানান, “আমাদের সামনে হংকংয়ের বিপক্ষে আরেকটি ম্যাচ আছে। আমরা সেই ম্যাচে তিন পয়েন্টের জন্যই যাব।”
হংকংয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের নাটকীয় হারে ভেঙে পড়লেও, নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় দেখাতে চান কোচ ক্যাবরেরা। এখন দেখার বিষয়, সেই প্রত্যয়ের প্রতিফলন মাঠে দেখা যায় কি না।