
তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দুই শিক্ষার্থীকে অস্ত্র দিয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। গতকাল বিকাল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে এই ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় নিজেই হামলার শিকার হয়েছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন হামলায় অভিযুক্ত এক শিক্ষার্থী। ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ( ৮ সেপ্টেম্বর) উভয়পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ ঘটনার সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের আশিক ইকবাল সাদ ও আনিকা আশরাফী এবং মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের মোরসালিন মুন। তবে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সহ-সমন্বয়ক ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের গোলাম রব্বানীকে ঘটনার মূল হোতা বলে অভিযোগ করেছেন সাদ ও আনিকা। তবে এ ঘটনার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন গোলাম রব্বানী।
জানা গেছে, গতকাল বিকাল ৪ টার বাসে সাদ, আনিকা ও মোরসালিন মুন ক্যাম্পাস হতে কুষ্টিয়া ফেরার সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষই নিজেদের ভুক্তভোগী বলে দাবি করেন। এসময় আনিকা, সাদ ও মোরসালিন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
সাদ ও আনিকার লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাসে মোরসালিন মুনসহ অজ্ঞাত কয়েকজন সাদের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। এতে আনিকা বাধা দিলে তার হাতে অস্ত্র চালিয়ে দেয়। এতে তার হাত রক্তক্ষরণ হয়। মারধরের সময় মোরসালিনের মুখে মাস্ক পড়া ছিল। পরে তার মাস্ক খুলতে গেলে সে পালিয়ে যায়।
মোরসালিনের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জেরে গতকাল বাসে উঠলে সাদের সাথে মোরসালিনের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে সাদসহ তার বন্ধু মোরসালিনের উপর আক্রমণ করলে আত্মরক্ষার জন্য তাদেরকে মোরসালিন প্রতিহত করেন। এতে তার হাত ও পা কাটা যায়। এক পর্যায়ে সাদসহ তার বন্ধুরা মোরসালিনকে ধাওয়া করলে সে বাস থেকে নেমে যায়।
এদিকে লিখিত অভিযোগে সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানীকে জড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, গতকাল ওই দুজনের মধ্যে বিগত ঘটনার জের ধরে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে ঘটনার পরিকল্পনাকারী হিসেবে অপবাদ দিয়েছে। অথচ এর সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা ও পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। গতকাল (৭ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহীদ আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারতের জন্য আমি ও বন্ধুরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু দেরি হওয়ায় সেখানে বন্ধুদের সাথে গল্প করছিলাম। পরে বিকাল ৪ টার পর আমরা রওনা দেই এবং রাতে শহীদ আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করি। পরে ফেসবুকে দেখলাম আমাকে সন্ত্রাসী ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এই বিষয়ে আশিক ইকবাল সাদ বলেন, করোনাকালীন আমি ক্যাম্পাসে আসার পর গোলাম রব্বানী ও শেখ সাকলাইনসহ কয়েকজন আমাকে সাদ্দাম হলের মাঠে র্যাগ দেয়। পরে আমার এক বড় ভাই এর প্রতিবাদ করলে তাকেও তারা ছাত্রলীগ দিয়ে মারধর করেন। তখন থেকে তারা আমার উপর ক্ষেপে রয়েছে। সেটির জের ধরেই তারা আমাকে মারধর করেন। এর আগে বিকাল সাড়ে ৩ টায় থেকে আমাকে ফলোআপ করা শুরু করেন সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী। এই ঘটনার মূল হোতা গোলাম রব্বানী।
আরও পড়ুনঃ ইবি শিক্ষক হাফিজুলের বিরূদ্ধে তদন্ত কমিটি
আনিকা আশরাফী বলেন, আমি একজন নারী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দ্বারা এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি ক্যাম্পাসকে আমার জন্য ও অন্য নারীদের জন্য নিরাপদ মনে করছি না। আমি এখন আতঙ্কে আছি।
এদিকে মোরসালিন মুন বলেন, ২০২০ সালে সিনিয়র-জুনিয়র পরিচয় নিয়ে সাদ ও তার বন্ধুরা আমাকে ও আমার জেলার বিভিন্ন স্যারকে অপদস্ত করেন। পরে বিষয়টি সমঝোতা হয়। তবুও তারা আমার বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা ছড়াতে থাকে। এর আগে ২০২৪ সালের নীলফামারী জেলা সমিতির ইফতার মাহফিলে শাখা ছাত্রলীগের উপ-মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ২০১৮-১৯ বর্ষের সাদমান ইরামের সহযোগিতায় বিভিন্ন টোকাই দিয়ে আমাকে ও সেখানে উপস্থিত ৫/৭জনকে বেধম প্রহার করেন। পরে আমিসহ ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় যাই। এ ঘটনায় সিনিয়রকে মেরে সবচেয়ে অপ্রীতিকর আচরণ করেছেন সাদ ও আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের মারুফ, ১৮-১৯ বর্ষের ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ফারহান শাহরিয়ার সৈকত ও আইন বিভাগের জাহিদ হাসান জিতু। এই ঘটনার জের ধরেই সাদ ও তার বন্ধুরা আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে যে আমার কাছে অস্ত্র ছিলো। কিন্তু আমার কাছে কোন অস্ত্র ছিল না। এমনকি অনাকাঙ্খিত বিষয়ে পূর্ব প্রস্তুতিও ছিল না।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে আমরা উভয়পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্দেশ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।
এদিকে উভয়পক্ষই নিজেদেরকে ভুক্তভোগী বলে দাবি করে একপক্ষ দুপুর ২ টায় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদ ও আনিকার উপর হামলার প্রতিবাদে ও বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে মানববন্ধন করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে বিকাল চারটায় মুরসালিন ও রব্বানী নির্দোষ দাবি করে মানববন্ধন করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।