spot_img

― Advertisement ―

spot_img

কালীগঞ্জে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সহযোগী সংগঠনের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

মোঃ মুক্তাদির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টারঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ উপজেলা শাখা ও এর সকল সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার (৮...
প্রচ্ছদজাতীয়দেশের নাম পরিবর্তনসহ সংবিধান, নির্বাচন এবং প্রশাসনে বড় সংস্কারের সুপারিশ

দেশের নাম পরিবর্তনসহ সংবিধান, নির্বাচন এবং প্রশাসনে বড় সংস্কারের সুপারিশ

দেশের নাম পরিবর্তনসহ সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন প্রক্রিয়া, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ প্রশাসনের কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গঠিত চারটি সংস্কার কমিশন। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এসব কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের নাম পরিবর্তন করে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ”-এর পরিবর্তে “জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ” রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংবিধানের চার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সাম্য, বহুত্ববাদ, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, এবং গণতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশঃ দেশের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’-এর পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার প্রস্তাব।
সংবিধানের চার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, বহুত্ববাদ, সামাজিক সুবিচার ও গণতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ। সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ও সিনেট) করার প্রস্তাব। সংসদ সদস্য নির্বাচনের বয়স ২৫ থেকে ২১ বছর করা এবং সংসদের মেয়াদ চার বছর নির্ধারণ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ চার বছর এবং সর্বোচ্চ দুইবার দায়িত্ব পালনের সীমা নির্ধারণ। “মুক্তিযুদ্ধ” শব্দের পরিবর্তে “জনযুদ্ধ” শব্দ প্রস্তাব। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন।

নির্বাচন কমিশন সংস্কারঃ নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন বাতিল, এবং পুনঃনির্বাচনের ক্ষমতা বাড়ানো। কোনো আসনে ৪০% ভোট না পড়লে পুনঃনির্বাচন করার বিধান। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধের প্রস্তাব। অনলাইন ভোটিং এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার সুপারিশ। নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। কোনো ব্যক্তি একাধিক আসনে প্রার্থী হতে পারবেন না। দলের নিবন্ধন শর্ত শিথিল এবং পাঁচ বছর পর নিবন্ধন নবায়নের বাধ্যবাধকতা। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারঃ দুদকের কমিশনার সংখ্যা পাঁচজন, যার মধ্যে একজন নারী। কমিশনের কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক প্রভাব এড়াতে নির্বাচন প্রক্রিয়া সুরক্ষিত রাখা। দেশ-বিদেশে নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন নজরদারির জন্য ‘কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড’ চালু। দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশল প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন। দুদকের উচ্চপদস্থদের যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিয়োগ।

পুলিশ সংস্কারঃ অভিযানের সময় জিপিএস ট্র্যাকিং এবং ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক। গায়েবি মামলা রোধ এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য মানবাধিকার কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো। থানায় জিডি রেকর্ড, তদন্ত ও পুলিশের কাজকর্মের সঠিক তদারকির জন্য ‘ওভারসাইট কমিটি’ গঠন। উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে নিয়ন্ত্রণে পাঁচ ধাপে বল প্রয়োগের বিধান।

জাতীয় সাংবিধানিক কাঠামোঃ জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব, যা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো সংসদের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষেও ভারসাম্য রক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন। উচ্চকক্ষের সদস্যদের মধ্যে ১০০ জন রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত এবং পাঁচজন রাষ্ট্রপতির মনোনীত। সাংবিধানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ।

আরও পড়ুনঃ অবশিষ্ট ডাটা যেকোনো প্যাকেজেই যুক্ত হবে, আরও যা জানাল বিটিআরসি

জরুরি অবস্থা এবং মানবাধিকার সুরক্ষাঃ রাষ্ট্রপতির একক সিদ্ধান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণার সুযোগ বাতিল। কেবল জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের অনুমোদনেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা। জরুরি অবস্থার সময়েও নাগরিক অধিকার, আদালতে যাওয়ার অধিকার স্থগিত না করার প্রস্তাব। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন।

আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতাঃ সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য সংস্থার স্বাধীনতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ। সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি, প্লট ও ভাতা পর্যালোচনা এবং সংশোধনের সুপারিশ। বাজেটের ৩০% স্থানীয় সরকারে বরাদ্দ।

ভোটিং প্রক্রিয়া ও গণতন্ত্রের সুরক্ষাঃ দলীয় রাজনীতির সঙ্গে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র, শিক্ষক ও শ্রমিক সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল। সব ধরনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সুযোগ বাতিল।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জানান, সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করা হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হতে পারে। তবে কমিশনগুলো তাদের কাজ আগেভাগে শেষ করতে পারলে সংলাপ আরও আগে শুরু হতে পারে।

সরকারের এই উদ্যোগকে দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংবিধানের এই প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশকে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।