spot_img

― Advertisement ―

spot_img

ইবি ছাত্রশিবিরের মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে অর্ধশতাধিক ইবিয়ানের মিলনমেলা

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) হৃদয়গ্রাহী এক মিলনমেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা।ঈদের...
প্রচ্ছদশিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনক্যাম্পাসইসলামিক রিয়েলিটি শো "হাদ্দাসানা"তে প্রথম রানারআপ হলেন ইবি শিক্ষার্থী

ইসলামিক রিয়েলিটি শো “হাদ্দাসানা”তে প্রথম রানারআপ হলেন ইবি শিক্ষার্থী

তানিম তানভীর, ইবি প্রতিনিধিঃ দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ইসলামিক মেগা রিয়ালিটি শো ‘হাদ্দাসানা’ (সিজন-২)-তে প্রথম রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হক। তিনি যশোরের বাঘারপাড়া থানার কৃষ্ণনগর গ্রামের মাওলানা মো. আব্দুর রউফের সন্তান।

‘ওয়াবিহি ক্বালা হাদ্দাসানা’ কর্তৃপক্ষ মাহমুদুল হককে প্রথম রানারআপ হিসেবে দুই লক্ষ টাকা, ক্রেস্ট, সবুজপত্র প্রকাশনীর বই, আল হারামাইনের চারটি সুগন্ধি, এজাজ শেরওয়ানি গ্যালারির একটি কটি, কোহিনূর কেমিক্যালের কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করে।

জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে মাহমুদুল হক বলেন, “এটি শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফল নয়, বরং আমার পিতা-মাতা, শিক্ষকদের দোয়া এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর অনুগ্রহের ফল। আল্লাহ যেন আমাকে আরও উত্তম পথে পরিচালিত করেন এবং ভবিষ্যতে আরও পরিশ্রম করার প্রেরণা দেন—এটাই প্রার্থনা।”

তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল উল্লেখ করে মাহমুদুল বলেন, “সিলেবাস নির্দিষ্ট থাকলেও এর গভীরতা অনেক বেশি ছিল, যা আমাকে উদ্বিগ্ন করেছিল। পাশাপাশি এটি টিভি সম্প্রচারিত একটি প্রতিযোগিতা হওয়ায় কিছুটা নার্ভাসনেসও কাজ করছিল। তবে আল্লাহর রহমতে সব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।”

ছোটবেলা থেকেই হাদীস শিক্ষার প্রতি আগ্রহের কথা জানিয়ে মাহমুদুল বলেন, “দারুন নাজাতে আলিম শ্রেণিতে পড়ার সময় হাদীসের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। বিশেষত নিজাম উদ্দিন হুজুরের কাছাকাছি থাকার কারণে আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হই। আমাদের শিক্ষকরা হাদীস মুখস্থ করতে বিশেষ উৎসাহ দিতেন, যা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।”

তিনি আরও জানান, “প্রতিযোগিতার সিলেবাসে ‘বিষয়ভিত্তিক হাদীসে কুদসী’ নামে একটি বই ছিল, যেখানে প্রতিযোগীদের একশত হাদীস মুখস্থ করতে হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অন্তত একশত হাদীস মুখস্থ করতে পারব—এই ভাবনা থেকেই অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”

সফলতার পেছনে যেসব মানুষের অবদান রয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মাহমুদুল বলেন, “আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহই ছিল আমার মূল পাথেয়। এছাড়া ‘হাদ্দাসানা’ (সিজন-১)-এ অংশগ্রহণকারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছিলাম। বিশেষ করে আমার সহপাঠী আব্দুল্লাহ আল নোমান রুমমেট হওয়ায়, সে আমাকে টিভি রাউন্ডের মতো করে রুমে হাদীস ও প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করত। এটি আমার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার দারুন নাজাতের সহপাঠী আব্দুল করিম অনলাইন বাছাই থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বাছাইপর্ব পর্যন্ত আমাকে গাইড করেছে। এছাড়া বিভাগের সিনিয়র ভাই আবু সালেহ মুহিত ও কাজিনদের অনুপ্রেরণা পেয়েছি, যা আমাকে প্রতিযোগিতায় সফল হতে সাহায্য করেছে।”

অনলাইন রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত প্রতিযোগিতাটি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। মাহমুদুল জানান, “প্রাথমিক বাছাইপর্বে প্রায় ২০০০-২২০০ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে, যেখান থেকে ১৫০ জনকে পরবর্তী ধাপে নির্বাচিত করা হয়। চূড়ান্ত বাছাইপর্বে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ১০ জন প্রতিযোগীকে মূল প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত করা হয়।”

আরও পড়ুনঃ ঈদ-উল-ফিতর: সংযম, আনন্দ ও মানবতার বন্ধন

টিভি রাউন্ডে ১০ জন প্রতিযোগীকে পাঁচটি গ্রুপে ভাগ করা হয় এবং প্রতি দুই রাউন্ড পর পর দুজন প্রতিযোগীকে বাদ দেওয়া হয়। কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত এভাবেই চলে প্রতিযোগিতা। সেমিফাইনাল রাউন্ডে নকআউট পর্বের মাধ্যমে ৬ জন থেকে ৪ জনকে গ্র্যান্ড ফাইনালের জন্য বেছে নেওয়া হয়।

মাহমুদুল বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, সেই চূড়ান্ত পর্বে আল্লাহ তাআলা আমাকে দ্বিতীয় স্থান অর্জনের তৌফিক দান করেছেন।”

এই প্রতিযোগিতায় অর্জিত পুরস্কার ও সম্মান পিতা-মাতার হাতে অর্পণ করতে চান মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, “আমার প্রতিটি সাফল্যের নেপথ্যে আমার মা-বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম ও দোয়া রয়েছে। তাই এই পুরস্কার তাঁদের জন্য উৎসর্গ করলাম।”

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হকের এই অর্জন শুধু তাঁর ব্যক্তিগত নয়, বরং পুরো ইসলামী শিক্ষার ধারাকে আরও সমৃদ্ধ করার একটি উদাহরণ। তাঁর এই সাফল্য ভবিষ্যতে আরও শিক্ষার্থীকে হাদীস শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।