spot_img

― Advertisement ―

spot_img
প্রচ্ছদশিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনক্যাম্পাসরাজশাহী কলেজে শহীদ রায়হান আলীর নামে নামকরণে বিকৃতি, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

রাজশাহী কলেজে শহীদ রায়হান আলীর নামে নামকরণে বিকৃতি, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধিঃ রাজশাহী কলেজে জুলাই অভ্যুত্থানের একমাত্র শহীদ রায়হান আলীর স্মরণে নতুন ভবনের নামকরণকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ। কলেজ প্রশাসনের স্থাপন করা নামফলকে লেখা হয়েছে ‘শহীদ রায়হান ব্যবসায় প্রশাসন ভবন’, যেখানে শহীদের পূর্ণ পরিচয় ‘রায়হান আলী’ থেকে ‘আলী’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (২০ জুন) সকালে নামফলকটি জনসমক্ষে এলে মুহূর্তেই তা নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, ইচ্ছাকৃতভাবেই একজন শহীদের নাম বিকৃত করে তাঁর আত্মত্যাগের গুরুত্ব খাটো করার অপচেষ্টা চলছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজশাহী কলেজে ছাত্র-জনতা ও ফ্যাসিস্ট বাহিনীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন রায়হান আলী। ৮ আগস্ট আইসিইউতে তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে তিনি শহীদ হন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর সম্মানে দশতলা নতুন ভবনের নামকরণ করলেও তা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী রাফিন বলেন, “শহীদের ‘আলী’ বাদ দেওয়া মানে তাঁর প্রকৃত পরিচয় মুছে ফেলা। এটি শুধু একজন মানুষের নয়, একটি ইতিহাসের বিকৃতি।”
ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, “শহীদের নাম বিকৃতি লজ্জাজনক। এটি সচেতনভাবে করা হলে তা ক্ষমার অযোগ্য।”

ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “এই ভবনটি শহীদ রায়হান আলীর নামে নামকরণ করা হয়েছিল আগের অধ্যক্ষের আমলে। এখন সেটি সংক্ষিপ্ত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করায় শহীদদের প্রতি অসম্মান হয়েছে।”
মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আকবর আলী জ্যাকি বলেন, “শহীদের নাম যদি দিতে হয়, তবে অবশ্যই তা পুরো নামেই দিতে হবে। অর্ধেক নাম মানেই অসম্মান।”

সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী মিশু বলেন, “যেহেতু ভবনের নাম শহীদের স্মরণে দেওয়া হচ্ছে, তাই তাঁর পূর্ণ নাম থাকা উচিত। শত বছর পরেও যেন মানুষ তাঁকে সঠিকভাবে স্মরণ করতে পারে।”

অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলী বলেন, “ভুলবশত হয়তো আলী শব্দটি বাদ গেছে। এটি সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখেছে। ভবিষ্যতে সংশোধন করা হতে পারে।” তবে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন—জানানো সত্ত্বেও কেন তা আগে সংশোধন করা হয়নি?

আরও পড়ুনঃ নতুন করে করোনার চোখ রাঙানি, প্রয়োজন সতর্কতা

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁরা এই ‘ইতিহাস বিকৃতি’ মেনে নেবেন না। শহীদদের পূর্ণ সম্মান নিশ্চিত না করা হলে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যাবেন। একই সঙ্গে কলেজের যেসব ভবন এখনো স্বৈরাচারদের নামে রয়েছে, সেগুলো দ্রুত শহীদদের নামে পুনঃনামকরণের দাবিও উঠেছে।

এটি এখন শুধু একটি নামের প্রশ্ন নয়—এটি একটি ত্যাগের মূল্যায়নের প্রশ্ন, ইতিহাস রক্ষার প্রশ্ন। শহীদের আত্মত্যাগ যেন বিস্মৃত না হয়, সেই দায়বোধ থেকেই রাজশাহী কলেজ প্রশাসনের প্রতি সংশোধনের দাবি তুলছেন সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব স্তরের ছাত্রনেতারা।