
মোহাম্মদ ইসমাইল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ সব ধরনের ফ্যাসিবাদ মোকাবেলায় সাংবাদিকদের সাহসিক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট দার্শনিক, মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশবাদী ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, “অনেক ধরনের ফ্যাসিবাদ আছে—ধর্মনিরপেক্ষতার ফ্যাসিবাদ, ধর্মান্ধতার ফ্যাসিবাদ, গায়ের জোরের ফ্যাসিবাদ। এগুলো প্রতিহত করতে সাংবাদিকদের জাগ্রত থাকতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষায় নিজস্ব গঠনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।”
শনিবার (১৯ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের এখন সবচেয়ে বেশি দরকার একটি গণমুখী গঠনতন্ত্র। সাধারণ মানুষকে বুঝাতে হবে গঠনতন্ত্র কী এবং কেন তা প্রয়োজন। গঠনতন্ত্রই পারে দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে এবং ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে।”
চট্টগ্রামের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে ফরহাদ মজহার বলেন, “চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। এখানে বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো অবস্থিত। তাই চট্টগ্রামের ক্ষতি মানেই দেশের জন্য ভয়াবহ বিপদ। এই শহরের রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন।”
তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি দূরীকরণে কাস্টমসকে বন্দর থেকে আলাদা করার প্রস্তাব দেন। বলেন, “কাস্টমস কর্মকর্তারা পণ্য দিনের পর দিন আটকে রেখে ঘুষ আদায় করেন। এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের ওপর বিদেশি হস্তক্ষেপের শঙ্কা থেকেই যায়।”
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “হাটহাজারীর মতো এলাকায় মসজিদ-মন্দির পাশাপাশি অবস্থিত, সেখানে যুগ যুগ ধরে মানুষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রয়েছে। এই ঐতিহ্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।”
ফরহাদ মজহার বলেন, “আর কখনো যেন দাড়ি-টুপি বা পাঞ্জাবি পরা কাউকে ‘জঙ্গি’ বলা না হয়, কিংবা গেরুয়া বসনে থাকা কাউকে ‘বিদেশি দালাল’ বলা না হয়।”
সংবিধান ও গঠনতন্ত্রের পার্থক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংবিধান কেবল একটি আইনি কাঠামো, কিন্তু গঠনতন্ত্র হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূল দার্শনিক কাঠামো। ড. কামাল হোসেন সংবিধানকে রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন, যা বিভ্রান্তিকর।”
আরও পড়ুনঃ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে ইবির বাঘিনীদের বিক্ষোভ
জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আইডিএল বিলুপ্ত করে জামায়াতে ইসলামী নামে পুনরায় রাজনীতিতে ফিরে আসা রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাব প্রকাশ করে। আমি তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্মান জানিয়ে নতুন নামে আত্মপ্রকাশের আহ্বান জানাই।”
সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশের আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি বলেন, “চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে এক সময় ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের ঘাঁটি বানানো হয়েছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের এখান থেকে উচ্ছেদ করেছে। এখন এই ক্লাব পেশাদার ও দেশপ্রেমিক সাংবাদিকদের আশ্রয়স্থল।”
তিনি আরও বলেন, “এখনো কিছু চক্র প্রেস ক্লাব নিয়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। সাংবাদিকদের সজাগ থাকতে হবে, কারণ সাংবাদিকতার আড়ালে যারা ফ্যাসিবাদের চর্চা করে, তাদের এখানে কোনো স্থান নেই।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল হক, অধ্যাপক আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক সাইমা আলম, মেজর (অব.) ফেরদৌস, কালের কণ্ঠের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মুস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, বাসস’র সিনিয়র সাংবাদিক মিয়া মোহাম্মদ আরিফ, দৈনিক এই বাংলার নির্বাহী সম্পাদক ওয়াহিদ জামান এবং বৈশাখী টিভির ব্যুরো প্রধান গোলাম মওলা মুরাদ প্রমুখ।