
বেরোবি প্রতিনিধিঃ
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ব্যবহার করে প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ করে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পেতে মরিয়া জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধান।
জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। ইউজিসি, শিক্ষামন্ত্রনালয়েও অভিযোগ জমা পড়েছে।
গত ৫ মে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে, পরে প্রক্টরের মধ্যস্থতায় সাত দিনের মধ্য নতুন বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানানো হলে আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
কিন্তু এরই মধ্যে আর একদল শিক্ষার্থী ৬ মার্চ আবারো প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঐ বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমানের নির্দেশনা জোরপূর্বক ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজ, নাইম ১২ তম ব্যাচের, জান্নাত সৃষ্টি, বিশ্বজিৎ, সুজন ও সম্রাটের নেতৃত্বে ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী আবারো তাদের বিভাগ থেকে সভাপতি করার দাবিতে দুপুর ১২ টা থেকে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রাখেন, এসময় শিক্ষক তাবিউরের নির্দেশে সকল ব্যাচের সি আরদের মাধ্যমে আন্দোলনে সবাইকে উপস্থিত হতে বলা হয়।
সি আর গ্রুপে দেয়া একটি পোস্টে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী যারা আন্দোলনে নেই তাদের লিস্ট ঐ শিক্ষকের কাছে জমা দেয়া হবে বলে বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ হরিপুর চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা: জরিপে এগিয়ে কাইয়ুম পুষ্প
ওই বিভাগের আরেকজন শিক্ষক মাহমুদুল হক,এক ফেইসবুক স্ট্যাটাস উল্লেখ করেন,”জালিয়াতি করে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না –মহামান্য হাইকোর্ট অবৈধ শিক্ষকের নিয়োগের ব্যাপারে এ রুল ও আদেশ জারি করেছেন। আবার দুদক ও ইউজিসি’র চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যানুসন্ধান কমিটি এর রিপোর্টে বলেছে তার নিয়োগের সুপারিশই নেই। উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশ ছাড়া নিয়োগের কোন এখতিয়ার সিন্ডিকেটের নেই। তাহলে ১১ বছর ধরে অবৈধভাবে চাকরি করলো আর এখন বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই দেখলো তার নিয়োগই নেই, এরপরও শিক্ষক হিসেবে বেতন-ভাতা পায় কীভাবে আমার মাথায় আসে না। এরপর সে বিভাগের প্রধান হওয়ার জন্য হুমকী দিচ্ছে। নিয়োগই নেই, আবার চায় বিভাগীয় প্রধান হতে”।
নাম প্রকাশ না শর্তে ওই বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, তাবিউর স্যার সর্বশেষ ক্লাসে এসে আমাদের আন্দোলনের যাওয়ার কথা বলেন এবং উনাকে বিভাগীয় প্রধান না করা হলে বিভাগ অচল করার হুমকি দেন এবং বিভাগে কোন ক্লাস পরিক্ষা ও হতে দিবেন না বলে জানিয়ে দেন। এখন আমরা আন্দোলনে না গেলে, সবার নাম লিস্ট করে নেওয়া হবে। আমাদের পরিক্ষায় কম মার্কস দিবে আর বিভাগের দুই একজন শিক্ষক ছাড়া সবাই তাবিউর স্যারের কথা মতো উঠবস করে। এজন্য পরপর তিনজনকে বিভাগের দায়িত্ব দিলেও কেউ নিতে রাজি হয় নি।
অভিযোগ আছে, জুনিয়র ১৪ ও ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক আন্দোলনে নেয়া হচ্ছে। এ বছরের মার্চে বিভাগীয় প্রধান নজরুল ইসলামের দায়িত্ব শেষ হলে প্রশাসন ১১ মার্চ নিয়ামুন নাহারকে বিভাগীয় প্রধান করা হয়। পরবর্তীতে তিনি ব্যাক্তিগত কারণে দায়িত্ব না নিতে চাইলে ওই দিনই বিভাগের আরেক শিক্ষক সরোয়ার আহমেদকে দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি ও দায়িত্ব গ্রহন করেন নি সর্বশেষ বিভাগের শিক্ষক রহমতুল্লাহকে ও দায়িত্ব দিলে তিনি তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। অভিযোগ আছে, তাবিউর রহমানের হুমকির কারণে বিভাগের কোন শিক্ষকই দায়িত্ব গ্রহন করেন নি। পরবর্তীতে প্রশাসন বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের জন্য একটি কমিঠি গঠন করে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে আন্দোলনে নিয়ে আসার একটি স্ক্রিনশট আমাদের নজরে এসেছে। শিক্ষার্থীদের চাপ করে আন্দোলনে নামানোটা আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। তবে যদি কেউ এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব।