spot_img

― Advertisement ―

spot_img

জবি ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণায় নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা, দুই সংগঠনের নিন্দা

ওমর ফারুক জিলন, জবি প্রতিনিধিঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়...
প্রচ্ছদশিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনক্যাম্পাসপুরান ঢাকায় মেসে মেসে শিবিরের ফাঁদ, টার্গেট নবীন শিক্ষার্থীরা

পুরান ঢাকায় মেসে মেসে শিবিরের ফাঁদ, টার্গেট নবীন শিক্ষার্থীরা

পুরান ঢাকায় মেসে মেসে শিবিরের ফাঁদ। বিশ্ববিদ্যালয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফেরদৌস। প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে সাটানো ‘টু-লেট’ দেখে উঠেন একটি ছাত্র মেসে। মেসে উঠিয়ে দিয়ে যান তার বাবা। এর তিন মাস পরেই ফেরদৌসের পিতা খবর পান ছেলে ঢাকায় পুলিশের হাতে আটক! তাৎক্ষণিক ঢাকায় এসে ছেলের খোঁজ পান আদলতে। জানতে পারেন, শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেফতার তার ছেলে।

বাবা হোসেন আলীর প্রশ্ন, তার ছেলে ঢাকায় গেলো মাত্র তিন মাস আগে, যে মেসে তিনি নিজেই তুলে দিয়ে গেলেন! সেখানে তার ছেলে শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত হলো কিভাবে?

শুধু ফেরদৌস নয়, ২০২২ সালে তৎকালীন শিবিরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সাজ্জাদ হোসাইন ও সেক্রেটারি মিকদাদ হোসাইনকে ধরতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থী। যার বেশিভাগ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থী ছিলেন। বাকি ৪ জন শিবিরের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলো। শিবিরের মেসে থাকার অভিযোগে ১ বছর করে জেল খাটতে হয় ওই শিক্ষার্থীদের।

আরও পড়ুনঃ জবির একমাত্র ছাত্রী হলের নাম পরিবর্তন

জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের জন্য আবাসিক সুবিধা না থাকায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী আশপাশে মেস ভাড়া নিয়ে থাকে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পাস ও পুরান ঢাকায় মেসে ছাত্র তুলে শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, নারিন্দা, শিংটোলা, ধুপখোলা মাঠ ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় মেস নিয়ে থাকে তারা। ওই মেসগুলো আবার বিভিন্ন জোনাল শাখায় বিভক্ত থাকে। ছাত্ররা শুরুর দিকে বুঝতে না পারলেও ধীরেধীরে শিবিরের জালে জড়িয়ে পড়ে।

অভিযোগ আছে, প্রথমবর্ষে শিক্ষার্থীদের মেসে তুলে নামে-বেনামে তাদের প্রাথমিক ফর্ম পূরণ করানো হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্যারিয়ার বিষয়ক সেমিনার, পিকনিক ও আর্থিক ও মেস সাহায্য দেয়ার মাধ্যমে শিবিরের কাজে জড়িয়ে ফেলা হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বুঝতে পেরে মেস থেকে বের হয়ে আসতে চাইলেও আর সম্ভব হয় না। নানারকম ভয়ভীতি দেখিয়ে শিক্ষাজীবন নষ্ট করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এরপরেও কিছু শিক্ষার্থী বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মেস থেকে বের হয়ে আসলেও এসব নিয়ে মুখ খুলেন না।

শিবিরের এসব ব্ল্যাকমেইলিং-এর শিকার বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান (ছদ্মনাম) বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একটা টু-লেট দেখে মেসে উঠি। কিছুদিন পর বুঝতে পারি এখানে শিবিরের কার্যক্রম চলে। টের পেয়ে আমি বের হয়ে যাই। পরবর্তীতে আরেকটা মেসে উঠেও দেখি এখানে তাদের কার্যক্রম চলে। পরবর্তীতে বন্ধুরা মিলে মেস নিয়ে থাকি। না হলে যেই মেসেই যাই সেখানেই শুধু শিবির।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, একটা মেসে উঠে দেখি রাত হলে ওয়াইফাই বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন বই পড়তে দেয়, একসাথে ট্যুরে যাইতে বলে, ফর্ম পূরণ করতে বলে। এসব দেখে ভয় পেয়ে যাই। ঢাকায় নতুন আসায় কাউকে কিছু বলতেও পারি না। কিছুদিন সায় দিয়ে চলার পর দেখি শিবিরের কাজ করতে চাপ দেয়। বাধ্য হয়ে মেস থেকে বের হয়ে আসি।

অভিযোগের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গনিত বিভাগ ২০১৫-১৬ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইকবাল হোসাইন ওরফে সাফওয়ান বলেন, ক্যাম্পাস ভিন্ন ভিন্ন আমাদের স্ট্র‍্যাটেজি থাকে। স্ট্র‍্যাটেজিগত বিষয় তো আমরা পাবলিকলি শেয়ার করবো না। এসব সাংগঠনিক হেকমতের বিষয়।

সার্বিক বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা খবর পেয়েছি একটা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী ওৎ পেতে আছে, যাদের কাজ ইসলামকে পুঁজি করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করা। নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীরা আসলে এদেরকে জালে ফেলে তাদের সংগঠনের সদস্য বানায়। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিজেদের সংগঠনের কাজ বাস্তবায়ন করতে চায়। আমরা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে যাচ্ছি। ধর্মকে ব্যবহার করে কোন সংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে অবগত করেছি, কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।