
আসাদুর রহমান বিজয়, গবি প্রতিনিধিঃ ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাত ধরে ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই মঙ্গলবার শুভ সূচনা ঘটে এক ব্যতিক্রম ধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের। যা সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্তের সপ্ন পূরণের বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত। রবিবার (১৪ জুলাই) এ বিশ্ববিদ্যালয় ২৭তম বর্ষে গৌরবের সাথে পদার্পণ করেছে।
সাভারের সন্নিকটে গড়ে উঠা ১৯৯৮ সালের বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ অন্যতম বিদ্যাপীঠ হিসাবে সমাদৃত হয়েছে। দীর্ঘ পথচলায় নিজস্ব আলোয় এ বিদ্যাপীঠ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গৌরব ও ঐতিহ্যে বিশ্বময় উদ্ভাসিত আজ। দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে বিদ্যাপীঠটি।
সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান যেন সুশিক্ষা অর্জন করে দেশের সম্মান রক্ষার্থে এবং অর্থনৈতিক ভাবে সচল হতে পারে সেই লক্ষ্য সামনে রেখে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী গড়ে তুলেছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়। পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গঠন, খেলাধুলায় এবং দেশের ক্রান্তি লগণে কিভাবে মানুষের পাশে থাকতে হয় সে শিক্ষায় সু-শিক্ষিত করে তুলছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
বাংলাদেশের মধ্যে এটিই ১ম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে রয়েছে ছাত্র সংসদ যার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে যোগ্য নেতা। প্রাসঙ্গিক, ঢাকার অদূরে ধামরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি জুয়েল রানা। এছাড়াও দেশের সর্বকনিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।
৩২ একরের এই সুবিশাল ক্যাম্পাস সবুজের সমারোহে ঘেরা। প্রবেশ করলেই বাদাম গাছের শীতল ছায়ায় যেন অন্যরকম এক সজীবতা অনুভূত হয়। রয়েছে দুটি সুবিশাল মাঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় জাতীয় পুরস্কার সহ অসংখ্য মেডেল এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনের পাল্লাটাকে করেছে ভারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলে। এছাড়াও ব্যাটমিন্টন কোট, ভলিবল কোট, লং টেনিস কোট উন্নত জিমনেসিয়াম তো রয়েছে।
দেশের ইতিহাসে সর্ব প্রথম কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক সমিতির সূচনা ঘটে ৩২ একরের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে ন্যায় নীতির সাথে সাংবাদিকতা করে আসছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) সদস্যরা।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টির অধিক সংগঠন রয়েছে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশিত হচ্ছে। উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি সংগঠন ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ক্লাব,মিউজিক ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, আর্ট ক্লাব, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ,অগ্নিসেতু সাংস্কৃতিক পরিষদ,শুভ সংঘ। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য রয়েছে সুবিশাল লাইব্রেরী ও রিডিং রুম। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিভিন্ন বইয়ের সংগ্রহশালা বা লাইব্রেরী।
বিভিন্ন উৎসব উৎযাপনে আমাদের এ ক্যাম্পাস মেতে থাকে সারাবছর। পিঠা উৎস, বসন্ত বরণ,পহেলা বৈশাখ এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের বছর জুড়ে থাকে নানা আয়োজন তারমধ্যে উল্লেখ যোগ্য গবিসাস এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, ফল উৎসব ইত্যাদি।
এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের নবীন বরণ, বিদায় অনুষ্ঠানে থাকে জমকালো আয়োজন। ব্যাচ ভিত্তিক চড়ুই ভাতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনন্য নির্দেশন। প্রত্যেকটা ব্যাচ আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন ছোট বড় আয়োজনের মধ্যে দিয়ে প্রতি সেমিস্টারের শুরুতে অথবা শেষে আয়োজন করে এ অনুষ্ঠানের।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন সেবা দিতে বর্তমানে রয়েছে ৫ টি বাস। ভবিষ্যতে পরিবহন সেবা আরও বাড়াবে বলে আশাবাদী প্রশাসন। কিছুদিন আগেই দুটি এসি বাস সংযোজন হয়েছে পরিবহন সেবায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিশাল ক্যান্টিন। এছাড়া সারাবছর জুড়ে পিঠা, ফুচকা, চটপটির দোকানে লেগে থাকে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। যার খাবারের স্বাদ এবং গুণগত মানে সেরা।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব ব্যাংককিং সুবিধা। যার মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের লেনদেন করে থাকেন।
আরও পড়ুনঃ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
এটিই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে নারী অধিকার ও সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে বিশ্বাসী। আর তাই প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কাজের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের চারজন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের দায়িত্বে রয়েছে। এছাড়াও যেসব নারীরা সমাজ থেকে পিছিয়ে রয়েছে তাদেরকে এখানে কর্ম স্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে বর্তমান প্রসাশন।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫ টি অনুষদ এবং ১৮ টি বিভাগ। উল্লেখ যোগ্য একটি অনুষদ ভেটেরিনারি, ২০১৬ সালের মে মাসে দেশের প্রথম ও একমাত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) ভেটেরিনারি শিক্ষা শুরু হয়। এছাড়া আরও রয়েছে আইন বিভাগ, ফার্মেসি বিভাগ, কৃষি অনুষদ, বায়োকেমিস্ট্রি, মেডিকেল ফিজিক্স, বাংলা, ইংরেজি সহ ১৮ টি বিভাগ।
বিভিন্ন বিভাগে গবেষণা করার মত রয়েছে অসংখ্য সুযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে রিসার্চ সেল।
গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বৃত্তির সুযোগ। প্রত্যেকটি বিভাগের বহু শিক্ষার্থী এই বৃত্তি সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসন বৃত্তির ব্যবস্থা করে থাকে।
এখানে আদিবাসীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ১০০+ আদিবাসী শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীও।