spot_img

― Advertisement ―

spot_img

জাতীয় নাকি স্থানীয় নির্বাচন: কোনটি আগে জরুরি?

নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে মানুষের আগ্রহ, আবেগ ও অংশগ্রহণের মাত্রা এক অনন্য সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অলিগলি—সর্বত্রই নির্বাচন ঘিরে জমে ওঠে...
প্রচ্ছদকলামভিন্নমতনারী কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব, ইউনুস সরকারের প্রতি হলুদ কার্ড

নারী কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাব, ইউনুস সরকারের প্রতি হলুদ কার্ড

আজ ৩ মে শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নারী কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত উত্তরাধিকার আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সকাল ৯টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, শনিবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন।

এরই প্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার সাভার ও আশুলিয়ার প্রায় প্রতিটি মসজিদে জুমার খুতবার আলোচনায় মসজিদের ইমামগণ নারী কমিশনের প্রস্তাবিত উত্তরাধিকার আইন সংশোধনের উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেন এবং ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইমামগণ বলেন, পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কিছু জ্ঞানপাপী তথাকথিত নারীবাদীদের উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে ইসলাম ধর্মের সর্বজনগ্রহণযোগ্য ও ইনসাফপূর্ণ উত্তরাধিকার আইনকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যেই এ প্রস্তাব আনা হয়েছে। তারা বলেন, ইসলামবিদ্বেষী কোনো রাষ্ট্রের এজেন্ডা এদেশে বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না।

এদিকে, ৩০ এপ্রিল বুধবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের আয়োজনে “নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামফোবিয়া: করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন এবং কমিশন বাতিলের দাবিতে একজোট হয়।

ইসলামবিরোধী এসব কমিশন বাতিল না করলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতৃবৃন্দ এবং ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। নবগঠিত এনসিপির নেতাও কমিশনের প্রতিবেদন বাতিলের দাবি জানান।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু এবং এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফউদ্দিন মাহদী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজি।

কমিশনের প্রতিবেদনে উত্তরাধিকার ও সম্পদে নারীর সমান অধিকারের সুপারিশকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত নারীবিষয়ক কমিশন ছিল একপাক্ষিক এবং এতে ইসলাম-চর্চাকারী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পাশ্চাত্য ভাবধারায় বিশ্বাসীদের নিয়ে গঠিত এই কমিশন বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে উপেক্ষা করেছে।

জামায়াত আমির বলেন, “আমাদের ভাগ ভাগ, টুকরো টুকরো করে আমাদের মাথায় আর কেউ কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না।” তিনি বলেন, “আমরা আন্দোলনে যেতে চাই না, কিন্তু বাধ্য করা হলে অবশ্যই আন্দোলনে নামব। জামায়াতের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।”

কমিশনের সুপারিশগুলিকে স্ববিরোধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নারী-পুরুষের সমান অধিকার, আবার নারীর জন্য কোটা রাখারও সুপারিশ করেছে। নারীরা সম্মানের প্রতীক, অথচ এই কমিশন ঘরে ঘরে সমস্যা সৃষ্টি করতে চায়। কমিশনের প্রতিবেদন কোরআন-সুন্নাহবিরোধী হওয়ায় জামায়াত তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কমিশনে যারা আছেন, তাদেরও প্রত্যাখ্যান করতে হবে। যদি কমিশন করতেই হয়, তবে এ দেশের বিশাল সংখ্যক নারীদের প্রতিনিধি রেখেই করতে হবে। আমরা এই কমিশন মানি না।”

চরমোনাই পীর বলেন, “আপনারা জনগণের ভোটে দেশ পরিচালনা করছেন না। তারপরও সব সময় আপনাদের সহযোগিতায় ছিলাম, এখনও আছি। আমাদের রাস্তায় নামিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিস্টদের সুযোগ করে দেবেন না। পরিষ্কার বার্তা, সেদিকে পা বাড়ালে ৫ মিনিটও সময় পাবেন না।”

তিনি আরও দাবি করেন, নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পেছনে আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে এবং একটি পলাতক শক্তি এর মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে।

মামুনুল হক বলেন, “পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নারীবিষয়ক সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কেউ কেউ জড়িত। এই প্রস্তাবের একচুলও যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, আমাদের লাশের ওপর দিয়েই করতে হবে।”

মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “কমিশনের সুপারিশ বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও মানুষের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চেয়ে নারীর সম্মান ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, এই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের ৩১৮ পৃষ্ঠার প্রস্তাবিত প্রতিবেদনে রয়েছে ১৭টি অধ্যায় এবং ১১টি সংযুক্তি। এটি গত ১৯ এপ্রিল ২০২৫ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হকের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রতিবেদনের প্রাপ্তির পর ড. ইউনূস নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে কমিশনের যেসব সুপারিশ ‘এখনই বাস্তবায়নযোগ্য’ বলে মনে করেন, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেন।

আরও পড়ুনঃ আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের নতুন কমিটি গঠন: সভাপতি জয়, সম্পাদক নিপু

প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলা হয়েছে, প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে নারী-পুরুষ সমতা অর্জনের পদক্ষেপসমূহ চিহ্নিত করে বিভিন্ন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে।

এই প্রতিবেদনের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার অনুচ্ছেদে এক পর্যায়ে বলা হয়েছেঃ
*সম্পত্তিতে নারীদের সমান উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করা জরুরী।
*এছাড়া গৃহকর্ম ও পরিচর্যার কাজে বোঝা কমাতে হবে। এটার স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পূণর্বন্টন করত হবে।
*মুসলিম আইনে বিবাহ তালাকের মত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও এই কমিশন কথা বলেছে যা অনভিপ্রেত।

এই নারী কমিশনের প্রস্তাবনায় ইসলাম ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো প্রতীয়মান হলেও, ইউনূস সরকার এখনো পর্যন্ত তা উপলব্ধি করে প্রতিক্রিয়া জানাননি। এতে মনে করা হচ্ছে, সরকার যত দেরি করবে এই বাস্তবতা অনুধাবনে, ততই ক্ষতি বাড়বে। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে এই কমিশনের সুপারিশ নিয়ে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা উপলব্ধি না করলে ইউনূস সরকার অচিরেই হলুদ কার্ড পেতে যাচ্ছে। আর সেই হলুদ কার্ড লাল কার্ডে পরিণত হতে কতক্ষণ লাগে, সেটি সময়ই বলে দেবে।

শেখ নজরুল ইসলাম
সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট