
মোঃ বিপুল মিয়া, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে নদীর বুকে ধুধু বালুচরে অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস নিয়ে চাষাবাদে নেমেছেন স্থানীয় কৃষকরা। ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বালুচরেই ভুট্টা চাষের মাধ্যমে নতুন জীবন গড়ার চেষ্টা করছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ধরলা নদী। বর্ষায় নদীর খেয়ালিপনায় একদিকে যেমন বন্যা আর ভাঙনের শিকার হতে হয়, তেমনই শুকনো মৌসুমে ফসলি জমি রূপ নেয় ধুধু বালুচরে। এবছরও নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, বড়ভিটা ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের কৃষকেরা বন্যা এবং নদীভাঙনে জমি হারানোর পর এই বালুচরে নতুন উদ্যমে ভুট্টা চাষ করছেন।
বড়ভিটা ইউনিয়নের পশ্চিম ধনিরামের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, “আমার সব ধানিজমি নদীর পেটে চলে গেছে। পানি সরে যাওয়ার পর নদীতে চর পড়েছে। কোনো জমি না থাকায় বাধ্য হয়ে বালুচরে ভুট্টা চাষ করছি।”
একই এলাকার কৃষক রহমত আলী বলেন, “আমার ১০ বিঘা জমির মধ্যে ৯ বিঘাই নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন বাকি মাত্র ১ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করছি।”
ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম জানান, “বন্যার কারণে জমিতে বালু পড়ে গেছে। সেই জমিতেই আমরা ভুট্টা চাষ করছি। জমিতে বীজ বপনের ৩০ দিন হয়েছে, এখন পর্যন্ত খেতের অবস্থা ভালোই।”
আরও পড়ুনঃ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পূর্বশত্রুতার জেরে হত্যা মামলা সাজিয়ে হয়রানীর অভিযোগ
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন জানান, “গত বছর ভুট্টার ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এ বছর কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। ফুলবাড়ীতে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা বীজ বপন শেষ হয়েছে। ৩৫০ জন কৃষককে ভুট্টার বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি যাতে ভালো ফলন নিশ্চিত করা যায়।”
বন্যা ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও ফুলবাড়ীর কৃষকরা থেমে থাকেননি। ধুধু বালুচরেই তারা স্বপ্ন বুনছেন এবং নিজেদের জীবিকা টিকিয়ে রাখতে অদম্য সাহস নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই সংগ্রাম স্থানীয় কৃষি উন্নয়নে নতুন দিশা দেখাচ্ছে।