মোঃ বিপুল মিয়া, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শামীম রানা নিজের হাতে বিমান তৈরি করে উড়িয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। প্রতিদিন আশপাশের গ্রামের মানুষ বিমানটি এক নজর দেখতে ভিড় করছেন। শামীমের প্রতিভা এবং তার সৃষ্টিশীল উদ্যোগ দেখে বিস্মিত হয়ে প্রশংসা করছেন অনেকে।
শামীম রানা ফুলবাড়ী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই কাগজ দিয়ে খেলনা বিমান তৈরি করতেন। সেই থেকে তার মনের ভেতর একটি আসল বিমান তৈরির স্বপ্ন জাগে। ইউটিউব ও গুগলের সাহায্যে দীর্ঘ ৯ মাস চেষ্টার পর ককসিট দিয়ে তৈরি বিমানটি সফলভাবে উড়াতে সক্ষম হন।
শামীমের তৈরি বিমানটির দৈর্ঘ্য ৫৬ ইঞ্চি, ডানা ৫০ ইঞ্চি লম্বা এবং ওজন ১.৩ কেজি। এটি রিচার্জেবল লিপো ব্যাটারিতে চলে এবং রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। তার তৈরি বিমানটি আকাশে ৫-১০ মিনিট উড়তে পারে এবং ৩ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে সক্ষম।
অভাব-অনটনের সংসারে বিমান তৈরির খরচ জোগানো সহজ ছিল না। প্রথমে শামীমের বাবা শহিদুল ইসলাম তাকে টাকা দিতে রাজি হননি। তবে ছেলের আবদারের চাপে শেষ পর্যন্ত তিনি অর্থ দেন। শামীমের মা-বাবা এখন গর্বের সঙ্গে জানান, তাদের ছেলের তৈরি বিমান এখন আকাশে উড়ছে, যা দেখতে প্রতিদিন মানুষের ভিড় জমে।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমান বলেন, “শামীম রানা আমাদের গর্ব। তার তৈরি বিমানটি আকাশে উড়তে দেখে আমরা আনন্দিত। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে আরও বড় কিছু করতে পারবে।”
৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবন কাটিয়ে ছিটমহলবাসী এখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছেন। শামীম রানার উদ্ভাবন সেই উন্নয়নের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবেক ছিটমহল আন্দোলনের নেতা আলতাফ হোসেন বলেন, “শামীম আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মুক্তি দিয়েছেন, যা না হলে এ ধরনের প্রতিভা বিকশিত হতো না।”
আরও পড়ুনঃ রামগঞ্জে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যুবকের সংবাদ সম্মেলন
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, “শামীম রানা নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি কাজ করেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং তাকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”
শামীম রানা জানিয়েছেন, “সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি উন্নত প্রযুক্তির মনুষ্যবিহীন প্লেন তৈরি করতে পারব। আমার স্বপ্ন, আমি একদিন প্রকৌশলী হয়ে বিমান তৈরিতে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করব।”
শামীমের উদ্ভাবনী উদ্যোগ পুরো এলাকায় অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় সহায়তা পেলে সে যে আরও বড় স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।