spot_img

― Advertisement ―

spot_img

কালীগঞ্জে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সহযোগী সংগঠনের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

মোঃ মুক্তাদির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টারঃ গাজীপুরের কালীগঞ্জে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ উপজেলা শাখা ও এর সকল সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার (৮...
প্রচ্ছদসারা বাংলাসাভার কারখানা দখলের অভিযোগ, খবর সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের উপর হামলা

সাভার কারখানা দখলের অভিযোগ, খবর সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের উপর হামলা

মোঃ আসিফুজ্জামান আসিফ, সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টারঃ রাজধানীর সাভারের বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড নামে একটি সিরামিক কারখানার মালিকানা নিজেদের দাবি করে সি পার্ল গ্রুপের বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ করেছে অন্য একটি পক্ষ। কারখানা দখলের খবরে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন এক সাংবাদিক। তাঁকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাভারের ভাগলপুরে এ ঘটনা ঘটে।

আহত সাংবাদিক আকলাকুর রহমান ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের নিজস্ব সংবাদদাতা এবং বেসরকারি নাগরিক টেলিভিশনের প্রতিনিধি হিসেবে সাভারে কর্মরত।

বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক দাবি করে অভিজিৎ কুমার রায় অভিযোগে বলেন, আজ সকাল ৯টার দিকে সি পার্ল গ্রুপের কর্মকর্তারা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ কয়েক শ সন্ত্রাসী নিয়ে জোর করে কারখানা চত্বরে প্রবেশ করেন। তাঁরা কারখানার নিরাপত্তারক্ষী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বের করে দিয়ে কারখানাটি অবৈধভাবে দখলে নেন।

অভিজিৎ কুমার রায় বলেন, ২০০৭ সালে বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড মোটা অঙ্কের দায় মাথায় নিয়ে বন্ধ হওয়ার পর একটি চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানির ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ স্পনসর শেয়ার কিনে এজিএমের মাধ্যমে কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় তাঁর পরিবার। পরবর্তী সময়ে জমিজমা–সংক্রান্ত কিছু জটিলতা থেকে যায়, যা এখনো চলমান। ২০১৯ সালে কারখানাটি আবার সচল করে কার্যক্রম শুরু হয়।

অভিজিৎ আরও বলেন, ২০১৬ সালে আগের মালিকপক্ষ চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে কোম্পানির মালিকানা দাবি করে আদালতে একটি মামলা করে। তবে উচ্চ আদালত তাঁর (অভিজিৎ) বাবা বিশ্বজিৎ কুমারকেই কারখানা পরিচালনার নির্দেশ দেন। নিম্ন আদালতে এখনো মামলাটি চলমান। গত বছর আগের মালিকপক্ষ বিক্রীত শেয়ার আবার সি পার্ল গ্রুপের মালিকপক্ষের কাছে বিক্রি করে দেয়।

এ ছাড়া সি পার্ল গ্রুপের লোকজন সম্প্রতি কয়েক দফায় কারখানাটি দখলের চেষ্টা করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আদালত থেকে এ বিষয়ে ১৪৫ ধারার আদেশ আনা হয়। কিন্তু আজ তাঁরা আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে অবৈধভাবে কারখানাটি দখল করেছেন।

মালিকানা নিয়ে উভয় পক্ষের আলোচনা হয়েছিল। ৫ মে কারখানাটির মালিকানার জটিলতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের কার্যালয়ে সভা হয়েছিল বলে জানান অভিজিৎ কুমার রায়।

তিনি বলেন, ৫ মে সংসদ সদস্য মির্জা আজমের কার্যালয়ে সাভারের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আগের মালিকের মেয়ে ফারজানা রুবাইয়েত খান ও সি পার্ল গ্রুপের তিনজনকে নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। সবাইকে তিনি জানিয়েছিলেন, আদালতের নির্দেশনা মেনে নথিপত্রের আলোকে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটি তিনি মেনে নেবেন। কিন্তু আজ তাঁরা জোর করে কারখানা দখল করেন।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল এক সংবাদ কর্মীকে বলেন, অভিজিৎ কুমার কারখানার সমস্যার বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছিলেন। তাঁর কথামতো প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল, তিনি সঠিক তথ্য দিয়েছেন। পরে সমস্যা সমাধানে দুই পক্ষকে নিয়ে মির্জা আজমের কার্যালয়ে আলোচনা হয়।

সেখানে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে জানা যায়, চুক্তি অনুযায়ী অভিজিৎরা ব্যাংকের দায় পরিশোধ করেননি। এতে আগের মালিকের পরিবারের সদস্যদের আইনি ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী দায় পরিশোধের পর আগের মালিককে কিছু টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি।

সংসদ সদস্য আরও বলেন, এটিও জানা যায়, অভিজিৎদের শেয়ার মাত্র ৭ শতাংশ। আগের মালিকের পরিবার এসব কারণে নিয়ম মেনে সি পার্ল গ্রুপের লোকজনের কাছে শেয়ার বিক্রিসহ ব্যাংকের বর্তমান পর্যন্ত দেনা সি পার্ল পরিশোধ করবে—এমন শর্তের মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর করেছে। তাদের শেয়ার ৬৯ শতাংশ। সবকিছু জানার পর অভিজিৎদের কারখানায় বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অন্য পক্ষকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাধানের জন্য বলা হয়েছিল।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারখানা দখলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে সাংবাদিক আকলাকুর রহমানকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। পরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে তাঁকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আকলাকুরের বাঁ চোখ ও মুখের বিভিন্ন স্থান মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে।

আকলাকুর রহমান জানান বলেন, ‘সকালে একটি পক্ষ কারখানাটি দখল করছে শুনে ঘটনাস্থলে যাই। দেখি কয়েকজন পুলিশসহ অনেকে সেখানে জড়ো হয়েছেন। কারখানার ভেতরে গিয়ে দেখি, কারখানার সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হচ্ছে, কম্পিউটার খুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ছবি তুলি। তখন পেছন থেকে কয়েকজন অতর্কিতে হামলা চালিয়ে মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিলঘুষি মারতে থাকে। আমার মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। মোবাইল উদ্ধার করা গেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকের ছবি পাওয়া যাবে।’

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, সাংবাদিক আকলাকুরের বাঁ চোখের চারপাশে রক্তক্ষরণ হয়েছে। চোখের কর্নিয়ার মাঝে একটি অংশ উঠে গেছে।

সরেজমিনে দুপুর ১২টার দিকে কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কাজ বন্ধ। শ্রমিকেরা কারখানা চত্বরে দাঁড়িয়ে আছেন। কারখানার একটি অংশে কিছু কাঠের লাঠি পড়ে থাকতে দেখা যায়। সি পার্ল গ্রুপের লোকজন ব্যতীত বিশ্বজিৎ কুমার রায়দের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের কারখানায় দেখা যায়নি।

কারখানার শ্রমিকেরা জানান, ঘটনার পর থেকে নতুন অনেকেই প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন।
বেলায়েত হোসেন নামের এক ব্যক্তি বললেন, ‘আজই কারখানায় এসেছি। আমার নিয়োগ এখনো হয়নি। আজই নিয়োগের প্রসেস হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ‘সকালে কাজ করছিলাম। হঠাৎ ৫০-৬০ জন কারখানায় ঢুকে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। জিএমসহ কয়েকজনকে মারধর করেন।’

প্রত্যক্ষদর্শী এক দোকানদার বলেন, ‘শতাধিক লোককে কারখানায় ঢুকতে দেখেছি। ভেতরে কী হইছে জানি না। কয়েকজনের হাতে লাঠি ছিল।’

নিরাপত্তারক্ষী সাগর হোসেন এক সংবাদকর্মীকে বলেন, বেলা ১১টার দিকে শতাধিক লোক কারখানায় আসেন। একজন ছবি তোলেন। যাঁদের ছবি তোলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। পরে তাঁকে মারধর করেন। শুনেছেন তিনি সাংবাদিক।

নিজেকে সি পার্ল গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মশিউর রহমান নামের একজন বলেন, ‘আজকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় এসে দায়িত্ব নিয়েছি। কারখানার ভেতরে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে বাইরে কিছু হয়েছে কি না, জানি না।’

পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুপুরে সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত সাংবাদিক আকলাকুরকে দেখতে যান সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান।

তিনি বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে সাভার মডেল থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তিনি নিজেও সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সংক্ষুব্ধ কাউকে পাননি।

আদালতের আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর উভয় পক্ষকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। আজকের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।