
মোঃ আবু হায়াৎ, সুনামগঞ্জ (জেল) প্রতিনিধিঃ ছেলেগুলো কিছুদিন আগেও ফ্রি ফায়ার কিংবা পাবজিতে আসক্ত ছিলো। টিকটক কিংবা রিল্স্ ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে অভিভাবকের হাতে গালি, বকা এমনকি পিটুনিও খেয়েছে। মাস দেড়েকের ব্যবধানে আজ তারা প্রশংসিত সব মহলে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা।
বলছিলাম তাহিরপুর উপজেলার সেইসব শিক্ষার্থীর কথা, যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে নিজেদের অবস্থানে থেকে মাঠে নেমেছিলো। যারা এখন দেশ সংস্কারে হাত দিয়েছে নিজেদের এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে। তাদের এমন সব ইতিবাচক কর্মকান্ডে খুশি অভিভাবকবৃন্দ। কেউ কেউ তাঁদের সন্তানকে নিয়ে খুব গর্ববোধ করছে। শিক্ষকরাও প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাদের শিক্ষার্থীদের।
দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর কর্মবিরতিতে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। তাই যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেয় দেশের শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় তাহিরপুর উপজেলায়ও এসব কাজ করে যাচ্ছের স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। উপজেলার তাহিরপুর বাজার, বড়ছড়া বাজারসহ আরও দুই একটি জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এসব কাজ করেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার ও শনিবার উপজেলার তাহিরপুর বাজার ও বড়ছড়া বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শনিবার সকাল ১০টার দিকে নিজেদের স্কুল-কলেজের নির্ধারিত ইউনিফর্ম, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড, হ্যান্ডগ্লাভস্, মুখে মাস্ক লাগিয়ে বড়ছড়া জয় বাংলা বাজারের এরিয়া গুলো পরিষ্কার করছেন ট্যাকেরঘাট T.L.M.P হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তারা সবাই সম্মিলিতভাবে একত্রিত্ব হয়ে কাজ করেছেন। তাদের এমন প্রশংসনীয় কাজ দেখে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ নিয়ে আসছেন কোল্ড ড্রিংস্, খুশি মনে কেউ খাওয়াচ্ছেন মিষ্টি, রাজনীতিবিদদের মধ্যে কেউ কেউ এনে দিচ্ছেন চকলেট, কেক, কোমল পানীয়। সামাজিক সংগঠন ব্যাবসাহিক নেতৃবৃন্দ মিলে প্রত্যেকজন শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিয়েছেন পানির বোতল।
এ বছরের ট্যাকেঘাট T.L.M.P হাইস্কুল এন্ড কলেজ এর পরিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীরা দেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছে। স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এখন দেশটা নতুন করে গড়তে হবে। আমাদের অনেক দায়িত্ব, অনেক কাজ। ঘরে বসে থাকলে হবে না, লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশ গঠনেও আমাদের সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে। তবে আমরা যেহেতু পরীক্ষার্থী তাই হয়তো এসব কাজে বেশি সময় দিতে পারবো না। পুলিশ তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করুক। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করবো।
আরও পড়ুনঃ ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার: ডা. শাহাদাত হোসেন
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক জানান, ছেলেদের নিয়ে দুঃশ্চিতা করতাম। যে হারে মোবাইলে আসক্ত হয়েছিলো তাদের দিয়ে কী হবে সেটা নিয় সব সময় চিন্তিত থাকতাম আমরা। এখন দেখছি, আমাদের এই প্রজন্মই দেশটাকে প্রকৃত স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছে। ঘুম থেকে উঠেই বাজারে চলে আসছে এসব দায়িত্ব পালন করতে। যতদিন লেখাপড়া নাই এসব কাজ করুক, আমাদেরও ভালো লাগে। লোকজন বলে আমাদের ছেলেরা দেশের জন্য কাজ করছে। শুনে মনে বেশ আনন্দ লাগে।
এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান ও মুরুব্বিয়ান রা বলেন, শিক্ষার্থীরা যেটা করে দেখিয়েছে সেটা আমরাও করতে পারিনি। তাদের কাছে আমরা ঋণী হয়ে রইলাম। শুধু ঘুরাফেরা , মোবাইল ফোনে আসক্ত একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠছে দেখে আমরা সত্যি খুবই ‘কনসার্ন’ ছিলাম তাদেরকে নিয়ে। সত্যি, তারা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এখন তারা দেশ গঠনে ভূমিকা পালন করছে, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে। তাদেরকে ধন্যবাদ।