
শেখ নজরুল ইসলাম, সাভার প্রতিনিধিঃ সাভার উপজেলার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রামের হরিণ পার্কের হলরুমে গ্রাম সুরক্ষাকল্পে রাত্রী কালীন পাহাড়ায় নিয়োজিত শতাধিক স্বেচ্ছসেবী নিয়ে গ্রাম সুরক্ষা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (১৬ আগষ্ট) দিবাগত রাত ১১টায় চারিগ্রাম ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সন্চালনায় ছিলেন চারিগ্রাম মিতালী সংঘের সভাপতি শেখ নজরুল ইসলাম।
মূলত ৫ আগষ্টে শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষে কুচক্রী মহলের ডাকাতির গুজব এমনকি কিছু এলাকায় অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টির আলোকে চারিগ্রামের মানুষেরর সম্মিলিত সিদ্ধান্তে -গ্রামের ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে চার পাঁচ টিমে বিভক্ত হয়ে রাত্রীকালিন পাহাড়া শুরু করেন।
গ্রামের প্রবেশদ্বার সমুহে চেকপোষ্ট বসিয়ে অবাধ চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ সহ গ্রামের ভিতরেও টহল পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়। মূলত আজকের বৈঠকে বিগত এগার দিনের অভিজ্ঞতার আলোকে উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে গ্রামের সমস্যা ও সম্ভাবনা সমুহ তুলে ধরা হয়।
বিগত দিনে গ্রামের মানুষ নিরাপদে থাকতে পারায় সকলে’ স্বেচ্ছাসেবকদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও এই পাহাড়ার ফলে পারস্পরিক আন্তরিকতা, সৌহাদ্র, ও বিপদে বন্ধুর পরিচয় প্রমানিত হয়েছে বলে উন্মুক্ত আলোচনায় উঠে এসেছে। গ্রামের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ছোটদেরকে সঠিক গাইড লাইন দিয়ে সঠিক পথে পরিচালনার উপর জোর দেন নাহিদ অনিল। উন্মোক্ত ধুমপান নিষিদ্ধ করা, ব্যাপক সালামের প্রচলন করে গ্রামের সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রতি জোর দেন তিনি।
সাইফুল ইসলাম রাত্রীকালীন আলোকিত গ্রাম গড়ার লক্ষে সকল বাড়িতে সিকিউরিটি লাইট স্হাপন ও বিপদকালীন সময়ে সকলকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন। শিবলু মাহমুদ গ্রামে ল্যাম্পপোষ্ট সমুহের সংস্কার ও সংস্থাপনের আহবান জানান। রুসেল মাহমুদ গ্রামের নির্ধারিত স্থানে সিসিটিভি স্থাপন ও পারমানেন্ট সিকিউরিটি নিয়োগের পরামর্শ দেন।
এই রাত্রীকালীন পাহাড়ার ফলে গ্রামের ছাত্র যুবকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিজেরাই মাদকের মত সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন চারিগ্রাম পশ্চিম পাড়ার যুব প্রতিনিধি মানিক। এমনকি সে গ্রামের পশ্চিম পাশের প্রবেশদ্বার রাস্তাটির বাঁশঝাড় পরিস্কার করে লাইটিঙের আশ্বাস দেন। মোবাইল গ্রুপ করে সমস্যাসমুহ তুলে ধরা এবং জরুরী প্রয়োজনে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে সকলকে সজাগ করার পরামর্শ দেন রাশেদুল ইসলাম সজল।
এই ছাত্র যুবকদের সাথে নিয়েই গ্রামের অন্যান্য সমস্যসমুহ যেমন রাস্তা পরিস্কার, বৃক্ষরোপনের মত কর্মসূচী নেয়ার জন্য মিতালী সংঘের প্রতি আহবান জানান ইমরান হোসেন। ছাত্ররা যেমন দেশের পরিবর্তন এনেছে তেমনি গ্রামকে পরিবর্তন করতেও ছাত্র তরুনদের এগিয়ে আসার আহবান জানান নাজমুল কবির ইউনুস।
আরও পড়ুনঃ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশএর আয়োজনে শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিল
এছাড়াও ব্যতিক্রমী এই বৈঠকে অংশ নেন আসাদুজ্জামান আসাদ, ওমর ফারুক, মোঃ তানভীর, রুবেল, বিল্লাল, আল আমীন, রাজীব সহ প্রতিনিধিবৃন্দ। অতিথিদের বক্তব্যে মাদকের চ্যালেন্জ মোকাবেলার আহবান জানানো হয় এবং গ্রামের পাশেই নিয়মিত সিসা পোড়ানো হয় বিধায় উদ্বেগ পোষণ করা হয় যা উদ্ভিদ, প্রাণী ও জনজীবনের জন্য মারাত্বক হুমকি। সকলে একযোগে এসব অপকর্ম প্রতিরোধের ওয়াদা করেন।
জরুরী নাম্বার সমুহ বিশেষ করে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন সাহেবদের মোবাইল নাম্বার সেভ করে রাখার পরামর্শ দেন লোকমান শেখ। গ্রামের যেকোন সমস্যা সমাধানে পাশে থাকার প্রত্যায় ব্যক্ত করেন আল ফালাহ ট্রেনিঙ সেন্টারের মালিক আল মামুন। সকলে মিলে চেষ্টা করলে চারিগ্রামকে সিঙ্গাপুর বানানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। লাইটিঙে সহযোগীতা ও তিনটি সিসিটিভি স্থাপন করে দেয়ার আশ্বাস দেন জনাব মামুন।
মিতালী সংঘের সাধারণ সম্পাদক তারেকুল ইসলাম উপস্থিতির মধ্য থেকে যারা গ্রাম পাহাড়ায় অংশ নিয়েছেন কিন্তু মিতালী ক্লাবের সদস্য নয় তাদেরকে সম্পূর্ণ ফ্রি তে ক্লাবের সদস্য হওয়ার আহবান জানান। এবং গ্রাম পাহাড়ায় অংশ নেয়া টিম লিডারদের মধ্য থেকে মোঃ আল আমিন, তানভীর, আলআমিন, তৌফিক ও আনিসকে মিতালীর পাড়া প্রতিনিধি হিসাবে মনোনিত করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে জনাব আতাউর রহমান সকলের পরামর্শ পর্যালোচনা করেন এবং মানুষের কল্যাণে সকলকে সাথে নিয়ে পাশে থাকার আহবান জানান