আফসানা মিজান মিমি, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বন্যায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকর দেখা দেয়, ফলে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস ছড়িয়ে পড়ে। আজিমুর রোকেয়া রহমান ট্রাস্ট এর অর্থায়নে, ডু সামথিং ফাউন্ডেশন – DSF থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেছে।
গাড়িতে দুই হাজার লিটার পানি ট্যাংকিতে পানি লোড করে এই টিম চলে যাচ্ছে যেখানে গত ছয় (০৬) দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। ট্যাংক থেকে লাইন দিয়ে পানিবন্দী মানুষের সাথে থাকা জগ, বালতি ও কলসিতে এই খাবার পানি দেওয়া হচ্ছে। পানির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নিকটতম পার্শ্ববর্তী এলাকার ড্রিংকিং ওয়াটার কোম্পানির পানি, অথবা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর নির্মিত গভীর নলকূপের পানি। এইভাবে প্রতিদিন ৬ হাজার লিটার পানি বিতরণের সক্ষমতা রয়েছে যা খুবই নগণ্য চাহিদার তুলনায়।
ফেনী জেলার আশ্রয় কেন্দ্র, পানিবন্দি এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে । বন্যার্ত এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
উক্ত টিমের প্রধান সমন্বয়ক অরূপ সরকার, বলেন ফেনী জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন এবং প্রতিটি গ্রাম গত ০৬ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। তাতে কি পরিমান খাবার পানির সংকট তা বলে বুঝানো যাবে না। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যেও বিদ্যুৎ সংযোগ আসবে কিনা তা কর্তৃপক্ষ বলতে পারছেন না। কেননা বিদ্যুৎ স্টেশন এখনো পানির নিচে নিমজ্জিত। বিদ্যুৎ সংযোগ হয়েছে শুধু ফেনী শহরের কিছুটা এলাকায়। আর শহরের কিছু এলাকার রাস্তা ব্যতীত অধিকাংশ ইউনিয়ন ও উপজেলার রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত।
অরূপ সরকার আরো বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের এই সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রাখতে হবে, ১. যে সকল জায়গার পানি নেমে গেছে, বিদ্যুৎ নেই জেনারেটর ব্যবস্থার মাধ্যমে পানির মটর চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে। ২. স্থানীয় যাদের বাসার ছাদে পানির ট্যাংকি গুলো খালি পরে রয়েছে সেগুলি নিচে নামিয়ে আমাদের গাড়ি থেকে রিফিল করার ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. প্রতিটা গ্রাম থেকে স্থানীয় তিনজনের একটি টিম এই কাজটি গতিশীল করার জন্য আমাদের সাথে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি আরো বলেন আমরা যে উদ্যোগটি নিয়েছি তা কম খরচে অধিক মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। ডু সামথিং ফাউন্ডেশন এর এই কার্যক্রম একটি মডেল মাত্র, যে কেউ এটি অনুসরণ করে তার এলাকায় বাস্তবায়ন করতে পারে।
সদর উপজেলার, কালীদহ ইউনিয়নে ১১ টি গ্রাম রয়েছে, ডু সামথিং ফাউন্ডেশন প্রথমত এই ইউনিয়নের মানুষদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করবে। তাদের সক্ষমতা বাড়লে এবং স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসলে অন্যান্য ইউনিয়নেও বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত পানির ব্যবস্থা করবে।
আরও পড়ুনঃ রংপুর-৪ আসনের এমপি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গ্রেপ্তার
ডু সামথিং ফাউন্ডেশন এর অন্যতম স্বেচ্ছাসেবক ও ক্লাইমেট এক্টিভেস্ট এস. এম শাহীন আলম বলেন, বোতলজাত পানি ব্যবহারে একদিকে চারপাশে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরো বলেন দিনদিন বাড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ। দূষিত হচ্ছে প্রকৃতি। প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মাটি, পানি ও বায়ুমণ্ডলের ওপর, বিষাক্ত করছে পরিবেশ। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রায় ৯৩ শতাংশ প্লাস্টিক বোতলে রয়েছে ক্ষতিকর উপাদান। এছাড়া প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারের ফলে শরীরে প্রবেশ করতে পারে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক। (সূত্র: ১৭ জানুয়ারি যুগান্তর)
নজিরবিহীন বন্যায় দেশের ১১ জেলার ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলছে সরকারের তথ্য। “পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে, নিরাপদ পানি হোক আমার অধিকার”