
রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সরকারি গোডাউন থেকে ১৭ হাজার ৫৩৩টি বই উধাও হওয়ার ঘটনা তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। শেরপুরে আটক ৯ হাজার বই রৌমারী থেকে পাচার করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তবে তদন্তে দেখা গেছে, উদ্ধার হওয়া বইয়ের চেয়েও দ্বিগুণ পরিমাণ বই ঘাটতি রয়েছে।
গত ২২ জানুয়ারি শেরপুর সদর উপজেলায় ট্রাকভর্তি ৯ হাজার সরকারি বই জব্দ করে পুলিশ। মাধ্যমিক পর্যায়ের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বইগুলো রৌমারী থেকে পাচার করা হচ্ছিল। পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায়, রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গোডাউনে ১৭ হাজার ৫৩৩টি বই অনুপস্থিত রয়েছে, যার মধ্যে ৯ হাজার ৬৭০টি বই শেরপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৭ হাজার ৮৬৩টি বইয়ের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গোডাউনে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সভ্যতা, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, ইসলাম শিক্ষা ও হিন্দুধর্ম শিক্ষা বিষয়ের ৮ হাজার ৫৬১টি বই পাওয়া গেছে, যার কোনো চালান কপি নেই। অর্থাৎ বইগুলো কীভাবে সেখানে এলো, তা কেউ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের জন্য মোট ৬৬ হাজার ৭৫০টি বই বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ৪১ হাজার ৭৮১টি বই বিতরণ করা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী গোডাউনে থাকার কথা ২৪ হাজার ৭৬৭টি বই, কিন্তু সেখানে পাওয়া গেছে মাত্র ৭ হাজার ৪৩৬টি বই।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, রৌমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসের গোডাউনে বই সংরক্ষণ ও বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন একাডেমিক সুপারভাইজার মোক্তার হোসেন, অফিস সহকারী আখেরুল ইসলাম ও নৈশপ্রহরী জামাল উদ্দিন। তদন্তে তাদের দায়িত্বে চরম অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুনঃ নরসিংদীতে জমি বিরোধে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, “পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। অভিযুক্ত একাডেমিক সুপারভাইজার ও অফিস সহকারী নিজেদের দায়িত্বে অবহেলার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।”
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, “তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। বই পাচারের ঘটনায় আরও কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”