
মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধিঃ রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে গাঁজা সেবনের সময় তিন শিক্ষার্থীকে আটক করা হলেও, ঘটনাটি গোপন রাখতে এবং সংবাদ প্রকাশে বাধা দিয়েছে কলেজ প্রশাসন। সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে বাধা প্রদান এবং ‘সংবাদ প্রকাশ করলে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে’ বলে হুমকির ঘটনায় শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত সাড়ে ৭টার দিকে মুসলিম ছাত্রাবাসের ইন্টারমিডিয়েট ভবনের ৪০৫ নম্বর কক্ষে অভিযান চালিয়ে তিনজন শিক্ষার্থীকে গাঁজা সেবনের সময় হাতে-নাতে আটক করা হয়। তারা সবাই রাজশাহী কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী।
আটকের পর শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস অফিস কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. যহুর আলী, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ইব্রাহিম আলী, ছাত্রাবাসের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. শাহ মো. মাহবুব আলম এবং অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা।
ঘটনাস্থলে পুলিশকে ডাকা হলে তারা উপস্থিত হয়ে তিন শিক্ষার্থীকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় সংবাদকর্মীরা ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে চাইলে কলেজ প্রশাসন বাধা প্রদান করে এবং অফিস রুমে প্রবেশ করলেও উত্তেজনাপূর্ণ আচরণের মুখোমুখি হন তারা। কলেজ প্রশাসন সরাসরি জানিয়ে দেয়, এ বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ না করতে। তা না হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নষ্ট হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
ছাত্রাবাসের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. শাহ মো. মাহবুব আলম বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বিবেচনায় সতর্ক করে ছেড়ে দিয়েছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।”
অন্যদিকে, উপাধ্যক্ষ ড. মো. ইব্রাহিম আলী বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা গাঁজা সেবনের সময় তিন শিক্ষার্থীকে আটক করি। তারা ঘটনাটি স্বীকার করেছে। অতিরিক্ত গাঁজা পাওয়া যায়নি। তাদের অভিভাবকদের ডেকে সতর্ক করা হবে এবং যিনি আবাসিক শিক্ষার্থী, তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
আরও পড়ুনঃ মেহেরপুর গাংনীতে স্কুল পুকুরে ডুবে শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছেন, থানায় এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন বর্তমানে আবাসিক শিক্ষার্থী এবং বাকি দু’জন পূর্বে আবাসিক ছিলেন। প্রথমে তাদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হলেও পরে আবার কলেজ অফিস কক্ষে ফিরিয়ে এনে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার এমন নিষ্পত্তি এবং সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়ার ঘটনায় কলেজ সাংবাদিক মহলে নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা দাবি করেছেন, মাদকসহ যেকোনো অপরাধে প্রশাসনের দায়িত্ব আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, সংবাদ চেপে যাওয়া নয়।