
মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধিঃ প্রায় দেড়শো বছরের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাজশাহী কলেজ দেশের রাজনীতির ইতিহাসে অসংখ্য নেতৃত্বের জন্ম দিয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হচ্ছে না কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন গণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ থেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনসহ দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ যেখানে গণতান্ত্রিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র, সেখানে রাজশাহী কলেজে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর দাবি-দাওয়া জানানোর মতো কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতে, নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় প্রশাসন এককভাবে সব সিদ্ধান্ত নেয়। এতে শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হয়।
৮০ ও ৯০-এর দশক পর্যন্ত নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো রাজশাহী কলেজে। পোস্টার, প্রচারণা আর উত্তেজনায় সরগরম থাকতো পুরো ক্যাম্পাস। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতা ও প্রশাসনিক অনীহায় সেই প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই জানেন না, তাঁদের কলেজে কখনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, এখনই দরকার গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন, “আমরা লাইব্রেরি থেকে শুরু করে টয়লেট সংকটসহ অসংখ্য সমস্যায় ভুগি। একটা নির্বাচিত সংসদ থাকলে আমাদের কথা জোরালোভাবে বলা যেত।”
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহজাবিন রহমানের প্রশ্ন, “ডাকসু-জাকসু নিয়ে আমরা সংবাদ পড়ি, কিন্তু আমাদের কলেজে কেন নির্বাচন হয় না? প্রশাসন চাইলে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেশকাত রহমান মনে করেন, “নতুন নেতৃত্ব উঠে আসার জন্য ছাত্র সংসদ সবচেয়ে জরুরি প্ল্যাটফর্ম।” প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুস সামাদ বলেন, “সংস্কৃতি ও খেলাধুলার সুযোগ সীমিত। সংসদ থাকলে এগুলো নিয়মিত করা যেত।”
আরও পড়ুনঃ রাকসু নির্বাচনে শিবিরের চমক: নারী ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীও প্যানেলে
রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও একই দাবি তুলেছে। রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, “আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। ডাকসু-জাকসুর মতো কারচুপিপূর্ণ নির্বাচন রাজশাহী কলেজে হতে দেওয়া যাবে না।”
রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুম বলেন, “ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুধু অধিকার আদায় নয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে এখান থেকেই অনেক খ্যাতিমান নেতা উঠে এসেছেন।”
তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক সহিংসতার ঝুঁকির কথা বলছে। এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা অপরিহার্য।
অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলী জানান, “ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাত্রনেতা তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। তবে সরকারি বা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া এই মুহূর্তে কলেজ পর্যায়ে নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। জাতীয় নির্বাচন শেষে বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।”