
শেখ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সাভার প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ আলোচিত ও সমালোচিত দল আওয়ামী লীগকে অবশেষে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বর্তমান ইউনুস সরকার। ১০ মে রাতের মধ্যরাতে ছাত্র জনতার লাগাতার আন্দোলনের মুখে সরকার এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয়। ঘোষণাটি আসে দীর্ঘ আট মাসের আলোচনা, বিতর্ক, ও গণচাপের প্রেক্ষিতে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছিল এই পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। দুপুরের পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট হতে শুরু করে। বিকাল তিনটার দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়তে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনরত ছাত্র জনতার আত্মত্যাগ, নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও। ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ থেকে ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা’—পরিচয়ের এই রূপান্তর সামনে চলে আসে সর্বস্তরের মানুষের চোখে।
দেশের নিয়ন্ত্রণে তখন সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ছাত্রনেতা ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সেনাবাহিনী প্রধান দেশের নেতৃত্ব তুলে দেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের হাতে।
তবে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া নিয়ে জনগণের ভেতরে নানা প্রশ্ন ও আলোচনার জন্ম হয়। অনেকে বলেন, তিনি নিজেকে বাঁচাতে পারলেও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কোনো সুবিচার করেননি। শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য তাপস, পরসসহ অনেকেই আগেই দেশ ছেড়েছেন, এমন তথ্যও উঠে আসে। হাসিনা তাঁর ছোট বোন রেহানাকেও হেলিকপ্টারে নিয়ে গেছেন বলে খবর ছড়ায়।
এরপর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক। কেউ কেউ গা ঢাকা দিয়েছেন, কেউবা বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে এখনো আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী ‘আছি’ বলে পোস্ট করলেও, সেটিকে জনসাধারণ দেখছেন পুরনো মানসিকতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র জনতার দৃপ্ত অবস্থান ছিল—”আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
আরও পড়ুনঃ ভালুকায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা, চালকের মৃত্যু
জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া ছাত্র গণহত্যার পরও দলের পক্ষ থেকে কোনো অনুশোচনা না আসায়, মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তীব্রতর হয়। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠে—এই দলে থাকা, সমর্থন করা বা এর আদর্শ ধারণ করা অনৈতিক, অমানবিক এবং গণতন্ত্রবিরোধী।
অবশেষে সরকার জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের সকল অঙ্গ সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এর আগে আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর অংশগ্রহণ এবং ছাত্র জনতার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণপ্রতিরোধের চাপে নিষিদ্ধ ঘোষণার পথ সুগম হয়।
এখন দেখার বিষয়—সরকার দলটির নেতাকর্মীদের নিয়ে কী পদক্ষেপ নেয় এবং বিদেশে অবস্থানরত নেতৃবৃন্দ নিজেদের অবস্থান কীভাবে তুলে ধরেন। জনমনে প্রশ্ন—এই দলটির নেতাকর্মীরা আদৌ কি তাঁদের রাজনৈতিক হিংস্রতা ত্যাগ করে একজন ‘মানুষের মতো মানুষ’ হয়ে উঠতে পারবেন?