spot_img

― Advertisement ―

spot_img

জাকসু নির্বাচন বর্জন, পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। পাশাপাশি পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে...
প্রচ্ছদজাতীয়ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক, সরকার টিকলেও দবি পূরণে ব্যর্থ বিএনপি

ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক, সরকার টিকলেও দবি পূরণে ব্যর্থ বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জনে হঠাৎ করেই নড়বড়ে হয়ে ওঠে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ভিত। রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় নতুন করে উত্তাপ। সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে তৈরি হয় প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে তাকে সমর্থনের বার্তা দেয় রাজনৈতিক দলগুলো, যা সাময়িকভাবে সরকারের ভরসা জুগালেও সংকটমুক্তির দিকনির্দেশনা এখনো অধরাই থেকে গেছে।

বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দোলাচলের পরও শেষ পর্যন্ত বৈঠকে অংশ নেওয়াকে বিশ্লেষকরা অন্তর্বর্তী সরকারের স্থায়ীত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিসেবে দেখছেন। তবে এ বৈঠকের পরও বিএনপির কোনো দাবি পূরণ হয়নি। প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ, বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ ও ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ।

অন্যদিকে সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনা—বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর খোলা নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর বিরোধিতা, সরকারের সঙ্গে সামরিক সম্পর্কেও টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দিয়েছে। গত ২০ মে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে নির্বাচন দ্রুত আয়োজন ও সরকারকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা কেবলমাত্র নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সম্ভব।”

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গির অমিল থেকেই এই টানাপোড়েন বাড়ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ভিন্নমত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

রাজনৈতিক চাপ আরও জোরালো করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তারা সরকারকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে আহ্বান জানায়, নইলে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় বলে হুঁশিয়ারি দেয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা কোনোভাবেই সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে নেই। তবে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে সরকার নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।” তিনি বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণেরও আহ্বান জানান।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন, ফ্যাসিবাদী ব্যক্তিদের বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণা ও নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো চূড়ান্ত করা জরুরি। নইলে গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হতে পারে।”

আরও পড়ুনঃ সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, মঙ্গলবার মাঠে নামছে ঐক্য ফোরাম

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার ওপর সকল পক্ষের আস্থা রয়েছে। এখন প্রয়োজন নির্বাচন আয়োজনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা এবং রাজনৈতিক আস্থার পরিবেশ নিশ্চিত করা।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার অভিজ্ঞতার ঘাটতি সরকারের কার্যক্ষমতা হ্রাস করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে অনৈক্য, ষড়যন্ত্র এবং পারস্পরিক দোষারোপ সরকারকে আরও দুর্বল করে তুলছে।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “জাতীয় নির্বাচনই হলো সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ। দ্রুত নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।”

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ গুঞ্জনের মধ্য দিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা দানা বেঁধেছে। একদিকে প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনীর টানাপোড়েন, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ ও সরকারকে ঘিরে অনাস্থা—সবকিছু মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এক গভীর সংকটের মুখে। এখন দেখার বিষয়, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকার কতটা দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে পারে কি না।