spot_img

― Advertisement ―

spot_img

উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন বেরোবি শিক্ষার্থীরা

বেরোবি প্রতিনিধি: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশন করা শিক্ষার্থীরা অবশেষে উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভেঙেছেন।বুধবার (১৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের বেগম...
প্রচ্ছদজাতীয়রাজশাহীতে চোখের জলে শেষ বিদায়, চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন পাইলট তৌকির

রাজশাহীতে চোখের জলে শেষ বিদায়, চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন পাইলট তৌকির

পাভেল ইসলাম মিমুল, স্টাফ রিপোর্টার: বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরকে শেষ বিদায় জানাতে রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে হাজারো মানুষ অশ্রুসিক্ত চোখে অংশ নেন জানাজায়।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাজশাহী নগরীর সপুরা গোরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

এর আগে রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তৌকির ইসলাম সাগরসহ বহু শিক্ষার্থী নিহত হন। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দেশের সর্বস্তরে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাজশাহীতেও একই আবেগে ভেসে যায় সাধারণ মানুষ।

মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে জানাজা পড়তে আসা মুসল্লিরা বলেন, “ঘটনাটা মন থেকে কিছুতেই মুছতে পারছি না। ছোট ছোট শিশুর মৃত্যু আর পাইলট তৌকিরের আত্মত্যাগ আমাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আমরা শুনেছি, পাইলট তৌকির চাইলেই নিজেকে বাঁচাতে প্যারাস্যুট খুলে লাফ দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেটা না করে বড় দুর্ঘটনা ঠেকাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।”

তারা আরও বলেন, “এমন আত্মত্যাগী একজন পাইলটকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বীরের মর্যাদা দেওয়া উচিত। পাশাপাশি তাঁর পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।”

জানাজায় অংশ নেওয়া অনেকেই জানান, তৌকির ইসলাম সাগর ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র, নম্র এবং সদাচারী। সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে রাজশাহীতে এসেছিলেন তিনি। তাঁর আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীরা বলেন, “এই শহরের ছেলেটা এত অল্প বয়সে দেশপ্রেমের নিদর্শন রেখে চলে গেল।”

স্টেডিয়ামের ভেতরে জানাজার পূর্বে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে শেষবারের মতো দেখেন। সেই মুহূর্তে কান্নায় ভেঙে পড়েন পাইলট তৌকিরের মা সালেহা খাতুন। ছেলেকে সম্বোধন করে আহাজারি করে বলেন, “আব্বা, তুমি কোথায় গেলে? তুমি শহীদ হয়ে গেছো, আব্বা!”

আরও পড়ুনঃ বড় মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া, বিষপানে নারী ও শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

তৌকিরের ছোট বোন বৃষ্টি খাতুন ভাইয়ের মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে বারবার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ও ভাইয়া, একটা কল দিতে পারলি না? একটু কথা বললি না ভাই?”

জানাজার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম বলেন, “আমার ছেলে খুব ভদ্র ও নম্র ছিল। যদি কারও মনে তার আচরণে কোনো কষ্ট থেকে থাকে, ক্ষমা করে দেবেন।” এ কথা বলার সময় তিনিও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তৌকিরের পৈতৃক বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে হলেও তাঁর পরিবার রাজশাহী শহরের উপশহর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করত। বর্তমানে নগরীর সপুরা ছয়ঘাটি মোড়ে তাঁদের নিজস্ব বাড়ির নির্মাণকাজ চলছে।

তৌকিরের জানাজা ও দাফনের প্রতিটি মুহূর্তে রাজশাহীর আকাশজুড়ে নেমে এসেছিল বিষণ্নতা। তাঁকে ঘিরে মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো নগর। এক তরুণ পাইলটের আত্মত্যাগ দেশবাসীর হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবে।