
মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “সংস্কারের বিপক্ষে থাকা বা ইতিহাসে দায়ভার বহনকারী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এনসিপির জোট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তা একেবারেই নীতিগত জায়গা থেকে আসবে, ক্ষমতার লোভে নয়।”
২৮ অক্টোবর দুপুর ২টায় রাজশাহী পর্যটন মোটেল প্রাঙ্গণে এনসিপির বিভাগীয় প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার কর্মসূচি উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই মুহূর্তে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। আমরা বিচার বিভাগকে এই ব্যবস্থার জায়গায় টেনে আনতে চাই না। অতীতে এ ব্যবস্থার নানা ক্ষতিকর দিক দেখা গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি ঐক্যমত কমিশনের বিষয় এবং গণভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে। তার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার কোনো সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
তবে তিনি উল্লেখ করেন, “বর্তমান সরকারের কিছু উপদেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তন আনতে পারে সরকার।”
নাহিদ ইসলাম নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিচ্ছে না। কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া প্রতীক আটকে দেওয়া প্রমাণ করে যে কমিশন স্বাধীন নয়, গায়ের জোরে পরিচালিত হচ্ছে।”
তার দাবি, “কমিশনকে ব্যবহার করে কিছু রাজনৈতিক শক্তি এনসিপির নির্বাচনী কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। আমরা শুরু থেকেই বলেছি—এই কমিশন গঠন আইনের ভিত্তিতে হয়নি।”
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাস্তবায়নের রূপরেখা ছাড়া জুলাই সনদ কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। আমরা চাই, এই সনদের বাস্তবায়নের রূপরেখা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করুন। গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ অনুমোদিত হবে এবং ইউনূসই এ আদেশ জারি করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান রাষ্ট্রপতি এই আদেশ দিতে পারবেন না, কারণ তা বিদ্যমান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বৈধতার জায়গা থেকেই এই আদেশ জারির পক্ষে।”
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি নয়। তারা বারবার গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, এবং তাদের ফ্যাসিবাদ এখনো সমাজে রয়ে গেছে—সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে।”
আরও পড়ুনঃ শেরপুর–২ আসনে প্রার্থীর ছড়াছড়ি, কৌশলযুদ্ধে জমে উঠছে ভোটের লড়াই
একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, “জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে। তারা বলছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হবে না—এ সাহস তারা কোথা থেকে পায়! সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা মনে করি, জাতীয় পার্টির বিচার হওয়া উচিত।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “প্রতীক ইস্যু সামনে এনে যদি নির্বাচন কমিশন মনে করে আমাদের ঠেকাবে, আমরা রাজনৈতিকভাবেই তা মোকাবিলা করব। সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রার্থী বাছাই চলছে, খুব শিগগিরই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।”
তিনি জানান, “আমরা এমন প্রার্থী দিতে চাই যারা তরুণ, নারী, সংখ্যালঘু ও প্রবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং সমাজ পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করবেন।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম মূখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসিফ নেহাল, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন, রাজশাহী মহানগর সমন্বয়ক কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলীসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।



