
কৃষি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে কৃষিখাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে পারি। এজন্য থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করি। থাইল্যান্ডকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানাই বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে থাইল্যান্ড সফরের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গভর্নমেন্ট হাউসে আমি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে অংশগ্রহণ করি। বৈঠকে অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের পাশাপাশি আমি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর) দ্রুত তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য থাইল্যান্ডের সহায়তা কামনা করি। একান্ত বৈঠকে শেষে আমার এবং থাইল্যান্ডের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দু’দেশের প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অধিকতর উন্নয়নকল্পে আমরা গঠনমূলক আলোচনা করি। এ সময় আমি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, ডিজিটালাইজড এবং জলবায়ু সহনশীল দেশে রূপান্তর এবং বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মূল্যবান অংশীদার হিসেবে থাইল্যান্ডের সহযোগিতা কামনা করি।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পর্যালোচনার পাশাপাশি অন্যান্য অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল— বিনিয়োগ, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক বিনিময়, পর্যটন সহযোগিতা, জ্বালানি নিরাপত্তা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, স্থল এবং সমুদ্র সংযোগ, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। এ সময় আমি দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার জন্য বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে বিশেষ করে, আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য থাই প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করি।’
আরও পড়ুনঃ সিদ্ধিরগঞ্জে স্কুল ছাত্রীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার
সরকারপ্রধান বলেন, নিরবচ্ছিন্ন আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে থাইল্যান্ডের রানং বন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি কোস্টাল শিপিং দ্রুত চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে আমরা একমত পোষণ করি। এ ছাড়াও, আঞ্চলিক সহযোগিতা সুদৃঢ়করণে ইন্ডিয়া-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ট্রাইলেটারেল হাইওয়েতে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করি। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড উভয়ই বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমি ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী একমত পোষণ করি যে, বিমসটেক এ অঞ্চলের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হতে পারে। আমি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে বিমসটেকের বর্তমান সভাপতি হিসেবে অভিনন্দন জানাই এবং তার নেতৃত্বে থাইল্যান্ড শিগগিরই বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে সফলভাবে
আয়োজন করবে মর্মে শুভকামনা জানাই।
তিনি বলেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ আসিয়ানের প্রতিবেশী। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশের আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ মর্যাদা চলতি বছরের মধ্যে প্রাপ্তির জন্য আবেদনের বিষয়ে থ্যাইল্যান্ড সরকারের নিকট আবারও অনুরোধ জানিয়েছি। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে, দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক ও একটি লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের সরকারি সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সফরে দ্বিপাক্ষিক
ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর বিষয়ে অগ্রগতি, আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি প্রভৃতি দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণে বিশেষ গুরুত্ব পালন করবে। ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারের প্রার্থিতালাভের জন্য এ সফর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
ষ্টাফ রিপোর্টার।